‘উইলসন ডিজিজে’ আক্রান্ত ৩ ভাইবোন, একজনের মৃত্যু

‘উইলসন ডিজিজ’ নামক বিরল রোগে আক্রান্ত এক পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে বরিশাল জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে তাদের এক সদস্য মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমানে তিন ভাইবোন একই রোগে আক্রান্ত হওয়ায় সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে অটোচালক বাবা আরিফুল ইসলামের পক্ষে।

আরিফুল নগরীর কাজিপাড়া এলাকার ভাড়াটিয়া বাসিন্দা। তার সংসারজীবনে তিন ছেলে এবং এক মেয়ে জন্ম নিলেও বর্তমানে তিন সন্তান বেঁচে আছে। বড় ছেলে আব্দুল কুদ্দুস উইলসন ডিজিজ আক্রান্ত হয়ে মারা যান। পরে একই রোগে আক্রান্ত হয় কুদ্দুসের তিন ভাইবোন আব্দুল কাদের, আলামিন মৃধা ও আয়শা সিদ্দিকা।

বরিশাল সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসক মুন্সি মুবিন খান জানান, উইলসন ডিজিজ হেপাটোলেন্টিকুলার ডিজেনারেশন নামেও পরিচিত। এটি একটি বিরল জেনেটিক ব্যাধি যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে বিশেষ করে লিভার এবং মস্তিষ্কে তামা জমার দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। লিভার সাধারণত পিত্তে অতিরিক্ত তামা নির্গত করে, যা পরে পরিপাকতন্ত্রের মাধ্যমে নির্মূল করা হয়।

রোগাক্রান্ত সন্তানদের মা কলি বেগম জানিয়েছেন, তার বড় ছেলে কুদ্দুসের শরীরে প্রথমে এ রোগ ধরা পড়ে। পরে তার তিন সন্তানের শরীরেও একই রোগ বাসা বাঁধে। বরিশালের কোনও চিকিৎসক বিষয়টি ধরতে না পারায় ঢাকায় নিউরোলজি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুণ্ডর শরণাপন্ন হন। তিনি রোগের ধরন বুঝে তা নিশ্চিত হন। এরপর বরিশাল সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসক মুন্সি মুবিন খানের শরণাপন্ন হন। কারণ, ঢাকায় গিয়ে তার পক্ষে সন্তানদের চিকিৎসা ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব ছিল না।

তিনি আরও জানান, দুই বছর আগে তার বড় ছেলে মারা যায়। এখন ওই তিন সন্তানের চিকিৎসা ব্যয়ভার বহন করা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তাদের চিকিৎসা করাবে নাকি সংসার চালাবে, এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে গোটা পরিবার। তার স্বামী যা আয় করে তা দিয়ে প্রতিদিনের সংসার খরচ চালানো কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। সেখানে তিন সন্তানের ওষুধ কিনলে আর সংসারে খাবার জোগাড় করা সম্ভব হয় না। এ অবস্থায় আবেদন করা হলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।

বড় ছেলে আব্দুল কুদ্দুসের মৃত্যুর আগে জেলা প্রশাসন থেকে ৫০ হাজার টাকা পেয়েছিলেন। পরে তিন সন্তানের ওষুধের জন্য কিছু টাকা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

এ ব্যাপারে বরিশাল সমাজসেবা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ জানিয়েছেন, ওই পরিবারের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনের কাছে আর্থিক সহায়তার জন্য আবেদন করা হয়। পরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।

তিনি ‍আরও বলেন, ইতঃপূর্বে মৃত কুদ্দুসের চিকিৎসায় ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি ফের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হলেও এটি চলমান থাকবে।’