যশোরে কয়েকদিন ধরে চলছে তাপপ্রবাহ। প্রচণ্ড গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগতপ্রায়। এই অবস্থা থেকে কিছুটা স্বস্তি দিতে শ্রমজীবী-পথচারী, বয়োজ্যেষ্ঠ এবং শিশুদের জন্য শহরের ছয়টি স্থানে বিশ্রাম, পানীয় জল, প্রয়োজনবোধে খাবার স্যালাইন ও গ্লুকোজের ব্যবস্থা করা হয়েছে ।
নেদারল্যান্ডের অর্থায়নে সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজ-সিএনআরএস নামে একটি বেসরকারি সংস্থা যশোর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় এই কাজ করছে। যশোর শহরের ছয়টি স্থানে অস্থায়ী ক্যাম্প করে শ্রমজীবী ও পথচারীদের জন্য স্যালাইন ও গ্লুকোজ মিশ্রিত পানি এবং বিশ্রামের জন্যে কিছুটা সময় শীতলতার ব্যবস্থা করেছে তারা।
আয়োজক প্রতিষ্ঠান জানায়, অতিরিক্ত গরমের কারণে বয়োজ্যেষ্ঠ ও শিশুদের পানিশূন্যতা থেকে কিছুটা স্বস্তি দিতেই মূলত এই আয়োজন। পানীয় জলের পাশাপাশি খাবার স্যালাইন ও গ্লুকোজ এবং পথচারী শ্রমজীবীরা যাতে কিছুটা সময় ঠান্ডায় বিশ্রাম নিতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শহরের প্রাণকেন্দ্র কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মোড়ে এমন একটি অস্থায়ী তাঁবু করা হয়েছে। এই তাঁবুতে রয়েছে দুটি এয়ার কুলার, বসার জন্যে বেশ কয়েটি চেয়ার। পথচারীরা সেখানে এসে নিজেদের নাম রেজিস্ট্রেশন করে ৫০০ এমএল বোতলের একটি পানি, কেউ খাবার স্যালাইন আবার কেউ এক পাতা গ্লুকোজ নিয়ে যাচ্ছেন।
কথা হয় সেবা নিতে আসা যশোর সদরের দেয়াড়া ইউনিয়নের দত্তপাড়া এলাকার রিকশাচালক আলাউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানান, গরমে অতিষ্ঠ হয়ে এখানে এসেছেন। গতকালও এসেছিলেন। স্যালাইনভর্তি এক বোতল পানি পান করার পর বেশ আরাম পেয়েছেন।
একটি স্যালাইন ও ৫০০ বোতলের একটি পানি নিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা শহরের সার্কিট হাউজপাড়ার বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা। স্যালাইন পানি খাওয়ার আগে সেখানে থাকা প্যারামেডিক সালাহউদ্দিন তার ব্লাড প্রেসার (বিপি) মেপে দেন। বিপি ১৮০/ ১০০ হওয়ায় তিনি তাকে স্যালাইন পান করতে নিষেধ করেন।
সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলাকালে বেলা ১ টা নাগাদ সেখানে দেড়শ’ মানুষ পানীয় জল ও স্যালাইন সুবিধা নিয়েছেন বলে জানান এই প্রকল্পের ভলান্টিয়ার কলেজছাত্র শেখ জাহিদুল ইসলাম জীবন।
তিনি বলেন, ‘ঈদগাহ মোড় ছাড়া শহরের মণিহার এলাকা, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, চাঁচড়া চেকপোস্ট, সবজিবাগ মোড় পালবাড়ী মোড় এলাকায় এমন তাঁবু রয়েছে। এই তাঁবুতে একজন করে প্যারামেডিকসহ মোট চার জন ভলান্টিয়ার কাজ করছেন।
‘তিন দিন ধরে আমরা এই তাঁবুতে পথচারী শ্রমজীবীদের সেবা দিয়ে আসছি। মানুষের বেশ আগ্রহও জমেছে। এই সেবার পাশাপাশি গরমে কী কী মেনে চলা দরকার, কোন কোন খাবার খেতে হবে ইত্যাদি বলে দেওয়া হচ্ছে, সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে একটি করে লিফলেট।’
জানতে চাইলে এই প্রকল্পের প্রজেক্ট অফিসার হারুন অর রশিদ বলেন, ‘দাবদাহের কারণে যশোর পৌর এলাকার বিভিন্ন বস্তি এলাকায় সাধারণ মানুষকে সচেতন করতেই আমরা এই কর্মসূচি নিয়েছি। এর মধ্যে জনসচেতনতাকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। আমরা পাড়ায় পাড়ায় সাধারণ মানুষকে তীব্র দাবদাহের বিষয়ে কী কী করণীয় সেটি অবহিতের পাশাপাশি দরিদ্র হকার, শ্রমমজীবী নারী-পুরুষ ও স্কুল গোয়িং শিশুদের জন্যে বিভিন্ন উপকরণ বিতরণেরও ব্যবস্থা রেখেছি। এই কর্মসূচি চলাকালে হকারদের জন্যে ৫০০ ছাতা, সবার জন্যে ৫০০ এমএলের ১৬ হাজার ও তিনশ’ ৫ লিটারের পানির বোতল, ৫ হাজার ক্যাপ এবং শিশুদের জন্যে পোর্টেবল ছোট্ট এক হাজার রিচার্জেবল ফ্যান সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দাবদাহের তীব্রতা যতদিন থাকবে, আমাদের অস্থায়ী তাঁবুর সেবা ততদিন চলবে।’