শেখ হাসিনার সঙ্গে ফোনালাপ

অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাতের ‘পরিকল্পনা’, আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা

বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবিরের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করেছে পুলিশ। সোমবার (৭ অক্টোবর) দুপুরের দিকে বরগুনা সদর থানার এসআই শামীম আহমেদ বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন। বুধবার (৯ অক্টোবর) মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরগুনা সদর থানার ওসি দেওয়ান জগলুল হাসান।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবিরের সঙ্গে ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মোবাইল ফোনে কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ওই ফোনালাপের ভিডিও পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। ওই আন্দোলনের সময় অসংখ্য নিরীহ ছাত্র ও সাধারণ মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে গেলে গত ৮ আগস্ট বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়।

পরে দেশের পরিস্থিতি ও জনজীবন অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় গোপালগঞ্জ জেলায় বিক্ষোভ মিছিল হয়। ওই মিছিলের অংশ হিসেবে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবিরের নেতৃত্বে গত ১০ আগস্ট বরগুনায়ও একটি বিক্ষোভ মিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করা হয়।

আরও উল্লেখ করা হয়, ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনার সঙ্গে জাহাঙ্গীর কবিরের মোবাইল ফোনেও কথোপকথনের সময় জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মী সমর্থকরাও তার সঙ্গে ছিলেন। এ কথোপকথনে অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাত করার বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়। ফলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাহাঙ্গীর কবিরসহ তাদের সমর্থকদের বিভিন্ন কার্যকলাপে বর্তমান সরকারের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয় এবং বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তা রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধের সামিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এর আগে, ১২ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন আওয়ামী লীগের এই নেতা। তিন মিনিটের ফোনালাপে শেখ হাসিনা জাহাঙ্গীর কবিরকে বলেন, আপনারা শৃঙ্খলা মেনে দলীয় কার্যক্রম চালাবেন। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসকে যথাযথভাবে পালন করবেন। এ সময় জাহাঙ্গীর কবির শেখ হাসিনাকে বলেন, আপা আপনি ঘাবড়াবেন না (মনোবল হারাবেন না)। আপনি ঘাবড়ালে আমরা দুর্বল হয়ে যাই। আমরা শক্ত আছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি ঘাবড়াবো কেন। আমি ভয় পাইনি। আপনারা দেখছেন, আমাদের পুলিশ বাহিনীকে মেরে কীভাবে ঝুলিয়ে রেখেছে। আমাদের কর্মীদের মেরেছে। বোরকা পরে মেরেছে। এ দেশটা রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে। আপনারা যেভাবে আছেন থাকেন।

১৪ আগস্ট ভোর ৬টার দিকে তার বাস ভবন আমতলারপাড় থেকে তাকে গ্রেফতার করে বিকালে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মাহবুব আলম চাঁদাবাজি মামলায় তাকে কারাগারে পাঠান।

এ বিষয়ে বরগুনা সদর থানার ওসি দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবিরের নামে সদর থানায় রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে দুটি চাঁদাবাজি মামলায় বরগুনা জেলা কারাগারে আছেন।