বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের স্টোররুমে অগ্নিকাণ্ডের ধোঁয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে রোগী ও স্বজনদের মধ্যে। এ সময় রোগীদের নিয়ে ছোটাছুটি করেন স্বজনরা। পাঁচতলা ভবন থেকে নেমে সামনের সড়কে ও হাসপাতালের মূল ভবনের নিচতলার ফ্লোরে তারা অবস্থান নেন। তবে এতে কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেছে মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
আগুনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফায়ার সার্ভিসের বিভাগীয় উপপরিচালক মিজানুর রহমান। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘সকাল সোয়া ৯টায় খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ৩টি ইউনিট নিয়ে কাজ শুরু করি। এরপর আরও ছয়টি ইউনিট যুক্ত করে একযোগে কাজ করে দেড় ঘণ্টার মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।’ তবে কীভাবে আগুন লেগেছে তা বলতে পারেননি তিনি। তদন্ত সাপেক্ষে তা বলা যাবে। এ ঘটনায় কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে ধোঁয়ায় তাদের কয়েকজন কর্মী অসুস্থ হয়ে পড়েন।
তিনি আরও জানান, ভবনের নিচতলার স্টোররুম থেকে আগুনের সূত্রপাত। সেখানে ম্যাট্রেস ও তুলা থাকায় আগুনের চেয়ে ধোঁয়ায় বেশি আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে পুরো ভবন। এতে করে রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দ্রুত রোগীদের ভবন থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে স্টোররুমের পেছনের দিকে থাকা দুটি জানালা ভেঙে ফেলা হয়। এরপর সেখানে পানির ফোর্স ব্যবহার করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এ সময় স্টোররুমে থাকা সকল মালামাল বের করা হয়। এতে করে দ্রুত সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।’
আনিস ও জামালসহ একাধিক রোগীর স্বজন বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ধোঁয়ায় পুরো ভবন আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। ভবনের বিভিন্ন স্থান থেকে ডাক-চিৎকারের আসছিল। আগুন আগুন বলে চিৎকার করলেও আগুনের দেখা মিলছিল না। পরে নিচে নেমে দেখি সেখান থেকে ধোঁয়া সারা ভবনে ছড়িয়ে পড়ছে। কেউ কেউ আবার বলছে, ময়লায় আগুন দেওয়ায় ধোঁয়া বের হচ্ছে। এরপর দ্রুত চারতলা গিয়ে রোগীকে নিয়ে খুব কষ্টে নিচে নামি। এ সময় সেখানে অবস্থানরত আনসার সদস্যরা সিঁড়ি আটকে দেয়। তারা বলেন, নামতে হবে না সিটে যান কিছু হয়নি। আবারও সিটে ফিরে আসি। এরপর ধোঁয়া চারতলা ও পাঁচতলায় ছড়িয়ে পড়লে রোগী নিয়ে নিচে নেমে সড়কে অবস্থান করি।’
তারা আরও জানান, তাদের সঙ্গে বিভিন্ন ফ্লোরে থাকা স্বজনরা দ্রুত সেখান থেকে রোগীদের নামিয়ে নিয়ে আসেন। তবে যাদের শ্বাসকষ্ট আছে তারা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের দ্রুত অক্সিজেন দেওয়া হয়। কেউ সড়কের পাশে আবার কেউ হাসপাতালের মূল ভবনের নিচতলায় জায়গা নিয়েছেন বলে জানান তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা সজল বলেন, ‘হাসপাতালের সামনের সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় ধোঁয়া এবং ডাক-চিৎকার শুনে অনেকেই মেডিসিন বিভাগে প্রবেশ করে রোগীদের উদ্ধারে সহায়তা করেন। এ সময় আনসার, ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনী উদ্ধারকাজে সাহায্য করায় দ্রুত সময়ের মধ্যে রোগীদের সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছে। তা না হলে ধোঁয়ায় শ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারতো।’
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. রেজা আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মেডিসিন বিভাগে থাকা আড়াই শতাধিক রোগীকে উদ্ধার করে হাসপাতালের মূল ভবনে নিয়ে আসা হয়েছে। যারা বেশি অসুস্থ তাদের আগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কিছু রোগী বিভিন্ন ওয়ার্ডে এবং বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। পূজা উপলক্ষে ছুটিতে থাকা সকল চিকিৎসক, ইন্টার্ন চিকিৎসক, নার্সদের ডেকে পাঠানো হয়েছে। তারা সকলেই রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করবেন।’ এ ঘটনায় কোনও ধরনের হতাহত নেই বলে দাবি করেন তিনি।