উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটডাউনের হুঁশিয়ারি

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শুচিতা শরমিনের পদত্যাগ দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে নানা স্লোগান দেন। সেইসঙ্গে এক দফা দাবি আদায় না হলে বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকা ‘শাটডাউন’-এর হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (০৫ মে) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন-১-এর নিচতলায় এ কর্মসূচি শুরু হয়। বেলা ২টা পর্যন্ত কর্মসূচি চলে। উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে ‘যে ভিসিরে পাই না, সেই ভিসিরে চাই না’, ‘দফা এক, দাবি এক-স্বৈরাচার ভিসির পদত্যাগ’, ‘নয় মাস চলে গেল, উন্নয়নের কী হলো?’, ‘কথায় কথায় মামলা, এবার গদি সামলা’ এমন নানা স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা। অবস্থান কর্মসূচি শেষে তারা বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাস ঘুরে এসে প্রশাসনিক ভবনের নিচে শেষ হয়।

কর্মসূচিতে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল ঢালী, লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মোকাব্বেল শেখ, আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম, মাইনুল ইসলাম, এস এম ওয়াহিদুর রহমান, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিন খান, মৃত্তিকা ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুম বিল্লাহ, বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমানসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল ঢালী বলেন, ‘বর্তমান উপাচার্য দায়িত্ব নেওয়ার পর দীর্ঘ ৯ মাস পার হলেও কোনও দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি। বারবার দাবি জানানোর পরও কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ায় আমরা মনে করি, তিনি এ পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। এজন্য তার পদত্যাগ চাই আমরা।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল মহানগরের আহ্বায়ক ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম বলেন, তিন সপ্তাহ ধরে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। কিন্তু উপাচার্য বা প্রশাসনের কেউ আলোচনায় বসার প্রয়োজন মনে করেননি। এই অবহেলাই প্রমাণ করে তিনি অযোগ্য এবং আমাদের দাবি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। দাবি মানা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে এবং প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকা শাটডাউন করা হবে।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, উপাচার্য দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পক্ষপাতমূলকভাবে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন, ফ্যাসিবাদী আচরণ করেছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান সংকট সমাধানে শিক্ষার্থীদের দেওয়া ২২ দফা দাবির বিষয়ে কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নেননি। এ ছাড়া গত জুলাইয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার না করা, ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে সম্প্রতি মারা যাওয়া শিক্ষার্থী জেবুন্নেছা হকের চিকিৎসায় সহায়তার আবেদনকে অবহেলা করা এবং আন্দোলন দমনে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করায় শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ। এজন্য উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে এক দফা দাবির আন্দোলন করছেন তারা।

এর আগে রবিবার বেলা ২টায় উপাচার্য শুচিতা শরমিনের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করা হয়। এদিন দুপুরে উপাচার্যের সংবাদ সম্মেলনের প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন ডেকে এ দাবি জানান। পরে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা।

শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলনের আগে দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেন উপাচার্য শুচিতা শরমিন। তিনি সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে অপসারণ ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মুচলেকা দিলে তাদের বিরুদ্ধে করা মামলা ও সাধারণ ডায়েরি (জিডি) প্রত্যাহারের কথা জানান। এর প্রতিক্রিয়ায় বেলা ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় শিক্ষার্থীরা পাল্টা সংবাদ সম্মেলন ডাকেন।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যের অপসারণ ও পাতানো সিন্ডিকেট সভা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ তার বাসভবনের ফটক ভাঙচুর করে বিক্ষোভ করেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এরপর গত ১৩ এপ্রিল উপাচার্যের নির্দেশে রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক নোটিশে অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে তাকে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর চার দফা দাবিতে আবার আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।

দাবিগুলো হলো অধ্যাপক মুহসিন উদ্দীনকে পুনর্বহাল, রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে অপসারণ, ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারের দোসর শিক্ষকদের বিভিন্ন কমিটি থেকে অপসারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্যমান উন্নয়ন না করে একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুনর্বাসন করায় উপাচার্যকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া।

২৭ এপ্রিল রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নামেন একদল শিক্ষার্থী। তারা রেজিস্ট্রারকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ দাবি করে কুশপুত্তলিকা দাহ করেন এবং রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে তালা দেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) কে এম সানোয়ার পারভেজ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেন। এর ধারাবাহিকতায় গত শনিবার সিন্ডিকেট সভায় মনিরুল ইসলামকে অপসারণ করা হয়। এ সিদ্ধান্ত আসার পরই রবিবার দুপুরে  শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে এক দফার ঘোষণা দেন।