সংবাদ সম্মেলন করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্য প্রফেসর ড. শুচিতা শারমিনের পদত্যাগের একদফা দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন শিক্ষকরা। উপাচার্যকে অপসারণ না করা পর্যন্ত তারাও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকবেন বলে জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের গ্র্যান্ড ফ্লোরে সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করা হয়।
সেখানে কোস্টাল স্ট্যাডিজ অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. হাফিজ আশরাফুল হক বলেন, শিক্ষার্থীরা গত ২৪দিন ধরে যৌক্তিক আন্দোলন করে আসছে। তাদের পাশে দাঁড়াতে পেরে শিক্ষক সমাজ আনন্দিত। জুলাই বিপ্লবের পর আশা ছিল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশে উন্নতি হবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সংকটে ভুগছে। এ কারণে প্রতিটি বিভাগে একাডেমিক কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। উপাচার্য সেদিকে দৃষ্টি না দিয়ে অবৈধভাবে নিম্ন গ্রেডে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, উপাচার্যের নিয়োগে তাকে সার্বক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থানের নির্দেশ থাকলেও তিনি সপ্তাহে দুই দিন কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করেন। এ কারণে যেকোনও প্রস্তাব তার দফতরে পড়ে থাকে। ক্যানসারে আক্রান্ত যে শিক্ষার্থী মারা গেছে, তার আবেদন চার মাস পড়ে ছিল উপাচার্যের দফতরে। এভাবে একাধিক অভিযোগ উত্থাপন করে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করা হয়।
এই শিক্ষক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে যে কয়জন শিক্ষক সদস্য ছিলেন, তাদের অনিয়মতান্ত্রিকভাবে সরানো হয়েছে। জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর ঘনিষ্ঠ চার জনকে সিন্ডিকেটের সদস্য করা হয়েছে। যাতে স্বৈরাচারী উপাচার্যের সব সিদ্ধান্ত পাস করতে কোনও সমস্যায় পড়তে না হয়।
শিক্ষকদের অভিযোগ, ২০২৪-২৫ সালে ভৌত কাজ ও ক্রয়ের জন্য ছয় কোটি দুই লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। উপাচার্যের সীমাহীন অদক্ষতা ও অযোগ্যতার কারণে আট মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও মাত্র ৭৭ লাখ টাকা ব্যয় করা সম্ভব হয়েছে। বই কেনার ৫০ লাখ টাকা থেকে একটি বইও কেনা হয়নি। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে বরাদ্দ থাকলেও উপাচার্যের অযোগ্যতার কারণে কোনও উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না।
এ কারণে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ও প্রশাসনিক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। ওই সব বিষয়ে সমস্যা সমাধানে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কাছে উপস্থাপন করলে উপাচার্য মামলা ও সাধারণ ডায়েরি করে স্বৈরাচারী কায়দায় শিক্ষার্থীদের দমন-নিপীড়নের পথ বেছে নেন। উপাচার্যের এ ধরনের ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ডের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়কে অচলাবস্থার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য স্বৈরাচারী সরকারের পক্ষাবলম্বনকারীদের খুঁজে খুঁজে বের করে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের লাভজনক কমিটি ও প্রশাসনিক পদে বসাচ্ছেন। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর প্রচারণার কমিটিতে থাকা ব্যক্তিদের লাভজনক পদে পদায়ন করেছেন।
সংবাদ সম্মেলন শেষে প্রশাসনিক দফতরের গ্র্যান্ড ফ্লোর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিল ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়।
এদিকে রবিবারের (১১ মে) মধ্যে উপাচার্যকে অপসারণ করা না হলে আগামী সোমবার থেকে ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
চার দফা দাবি নিয়ে দীর্ঘ ১৮ দিন আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে গেলে ভিসির পক্ষ থেকে বৈঠক না বসায় পরে ওই আন্দোলন চলে যায় এক দফা দাবিতে। ভিসির পদত্যাগের এক দফা দাবিতে প্রতিদিন অবস্থান কর্মসূচিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার আন্দোলনে সম্পৃক্ত হলেন শিক্ষকরা।