রংপুরে হার্ট অ্যাটাকে মুদি দোকানি সমেছ উদ্দিন মারা যাওয়ার ঘটনায় হত্যা মামলা সাজিয়ে শিক্ষক মাহমুদুল হককে গ্রেফতারের ঘটনায় মেট্রোপলিটন হাজিরহাট থানার ওসি আব্দুল আল মামুন শাহের বরখাস্ত ও তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক এই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করে তার গ্রেফতারের পেছনে কারা কারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি হেয়াত মামুদ ভবনের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান। দাবি বাস্তবায়নের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যথায় তিনি নিজেই আইনের আশ্রয় নেওয়াসহ আন্দোলনে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
গ্রেফতারের বর্ণনা দিয়ে শিক্ষক মাহমুদুল হক বলেন, ‘১৯ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি প্রোগ্রাম শেষে বাসায় ফিরে আমার অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলেসহ দুপুরের খাবার খেয়ে বসে ছিলাম। আমার স্ত্রী ও মেয়ে রাজশাহীতে অবস্থান করছিল। দুপুর আড়াইটার দিকে সাদা পোশাকে ও পুলিশের পোশাক পরে মেট্রোপলিটন হাজিরহাট থানার ওসি আব্দুল আল মামুন শাহসহ কয়েকজন পুলিশ আমার বাসায় প্রবেশ করে আমার নাম ধরে জানতে চায়- তখন আমি জানাই আমার নাম মাহমুদুল হক। আমি রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক। এ সময় ওসি বলেন, আমার নামে নাকি হাজিরহাট থানায় মুদি দোকানি সমেছ উদ্দিন হত্যা মামলা আছে। ওই মামলায় আমি নাকি ৫৪ নম্বর আসামি।’
তিনি বলেন, ‘আমি কয়েক বছর হলো শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছি। হাজিরহাট থানা ও ওই এলাকার নামও শুনিনি। সেই এলাকায় হত্যা বা মৃত্যুর ঘটনাও শুনিনি। এরপর আমাকে গ্রেফতার করার কথা জানিয়ে ওসি বলেন, তাদের সঙ্গে যেতে হবে। আমি ওসিকে কাপড় চেঞ্জ করার সময় চাইলে আমাকে শুধু প্যান্ট পরার জন্য ১০ মিনিট সময় দেওয়া হয়। এ সময় আমি আমার স্ত্রীসহ কারও সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। এরপর আমাকে গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়। নেওয়ার সময় ওসিকে জিজ্ঞাসা করি, আমাকে গ্রেফতারের বিষয়টি কি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে জানানো হয়েছে কি না? ওসি ওই সময় মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মজিদ অলীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। সম্ভবত পুলিশ কমিশনার আমাকে গ্রেফতার করার গ্রিন সিগন্যাল দেন।’
এই শিক্ষক বলেন, ‘এরপর আমাকে হাজিরহাট থানায় না নিয়ে সরাসরি কোতোয়ালি থানায় নেওয়া হয়। সেখানে ওই থানার ওসি আমাকে দেখেন, তবে কিছু বলেননি। এরপর সেখানেই দ্রুত কাগজপত্র ঠিক করে আমাকে সরাসরি আদালতে নিয়ে হাজতে ঢোকানো হয়। এরপর দ্রুত আদালতে তোলা হয়, সেখানে মাত্র চার সেকেন্ডের মধ্যে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়। এরপর আবারও আদালতের হাজতখানায় নেয়া হয়। আমি আমার আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলারও সুযোগ পাইনি। পরে আমার আইনজীবী আসেন। আমাকে হাজিরহাট থানা এলাকায় হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়া এক ব্যক্তির মামলায় ৫৪ নম্বর আসামি করা হয়। আমি রবিবার (২২ জুন) জামিনে মুক্তি পাই। আমি অসুস্থ ছিলাম, আমার মতো অনেককেই মিথ্যা সাজানো মামলায় ভিকটিম করা হয়েছে। কোনও রাজনৈতিক পরিচয় না থাকলেও অনেকেই কারাগারে অসহনীয় জীবন যাপন করছেন।’
শিক্ষক মাহমুদুল হক বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে একটি সংঘবদ্ধ চক্র বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হয়েছে। তারা আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাসপেন্ড করার জন্য চক্রান্ত চালিয়ে আসছে। বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে আমরা অংশ নিয়েছিলাম, আমাদের জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হবে এই আশা নিয়ে। আমি গণঅধিকার কর্মী হিসেবে মামলা বাণিজ্য, মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়ার বাণিজ্য, চার্জশিট না দিয়ে পরিবারকে নিঃস্ব করার বাণিজ্য থেকে মুক্তি চাই। আমার মতো যারা নির্যাতিত-নিপীড়িত তাদের বিষয়ে সরকার ব্যবস্থা নেবেন আশা করি।’
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ১৬/১৭ বছর ঢাকায় সাংবাদিকতা করেছি। আমি ইউএনবিতে কাজ করেছি। সর্বশেষ ডেইলি স্টারে সিটি এডিটর হিসেবে কাজ করেছি। এরপর দেশি-বিদেশি অধিকার সংগঠনে পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছি। শিক্ষকতায় যোগদান করেছি সাড়ে ছয় বছর আগে। বেরোবিতে দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় কর্মী ছিলাম। তৎকালীন উপাচার্যের বিরুদ্ধে ৭৯০ পৃষ্ঠার দুর্নীতির ফিরিস্তি প্রণয়ন, জাতীয় পতাকা অবমাননার মামলা করেছি। এসব কারণে একটি গোষ্ঠী আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।’
