বান্দরবানে খাদ্যসংকট চরমে

‘সাতাশটা পরিবার নিয়ে আমাদের হৈয়ুক খুমি পাড়া। কারো বাসায় খাবার নেই। আমরা বাঁচবো কিভাবে ?’

চরম খাদ্যসংকট চলছে বান্দরবানে
কথাগুলো বলছিলেন বান্দরবান জেলার চরম খাদ্যসংকট কবলিত উপজেলা থানচির হৈয়ুক খুমি পাড়ার বৃদ্ধ কারকারী হৈয়ুক খুমি। গত বছরের খারাপ আবহাওয়ায় জুম-ফসলের ফলন ভাল না হওয়ায় চলতি বছরের মার্চ থেকে খাদ্য সংকটে পড়েছে দুর্গম এলাকার এই অধিবাসীরা।


রেমাক্রি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওর্য়াড মেম্বার মাং চং ম্রো জানান, সাঙ্গু রির্জাভের বেশ কয়েকটি পাড়ার কারো কাছে খাবার নেই। না খেতে পেয়ে অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ডে জড়াতে পারে মানুষ।
থানচি উপজেলা চেয়ারম্যান ক্যহ্লা চিং মার্মা বলেন, দ্রুত এসব এলাকায় পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ করা উচিত, না হলে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

২ নম্বর তিন্দু ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মং প্রু অং মারমা জানান, দুর্গমতা, যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে আমার ইউনিয়নের ৭শ’ পরিবার খাদ্য সংকটে ভুগছে, খাদ্যের অভাবে মানুষ মারাও যেতে পারে।

থানচির রেমাক্রী ইউনিয়নের যোগী চন্দ্র পাড়ার হাতিরাম ত্রিপুরা জানান, বাসায় খাবার না থাকায় ছয় সদস্যের পরিবার নিয়ে তিনদিন না খেয়ে ছিলেন। জানা যায়, অনেকে ভাতের অভাবে জংলি আলু, মিষ্টি কুমড়া, আলেয়া (কলা গাছের কাণ্ডের নরম অংশ) খেয়ে ক্ষুধা মেটালেও বেশির ভাগ মানুষ রয়েছেন অনাহারে।

থানচির দুর্গম রেমাক্রি, তিন্দু, ছোট মদক, বড় মদক ও সাঙ্গু রিজার্ভ ফরেস্ট; মূলত এসব এলাকায় খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এসব এলাকায় ত্রিপুরা, ম্রো ও মারমা সম্প্রদায়ের বাস। পাহাড়ে জুম চাষের মাধ্যমে তারা সারা বছরের ধান সংগ্রহ করে রাখেন। কোনও কারণে ভালো ফলন না হলে, ইঁদুরের আক্রমন ঘটলে বা বন্যা দেখা দিলে বছরের খাদ্য মজুদ করা সম্ভব হয় না।

চরম খাদ্যসংকটে বান্দরবান

স্থানীয়দের দেওয়া তথ্য মতে, এসব এলাকার ৯৫ শতাংশ মানুষ জুমচাষে নির্ভরশীল। সুতরাং জুমধান ভাল না হওয়ায় খাদ্য সংকটে পড়েছে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পরিবার।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক জানান, পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য শস্য আছে। তাই দুর্গত এলাকায় জরুরি খাদ্য পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। খাদ্য সংকট চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত থাকতে পারে সরকারকে জানানো হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরিভাবে দুর্গত এলাকার ৮শ’ পরিবারের বিপরীতে ১৬ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে যা চাহিদার তুলনায় কম বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পথ দুর্গম হওয়ায় খাদ্য পৌঁছুতে দীর্ঘ সময় লেগে গেলে এই পরিমাণ অর্ধেকে পরিণত হবে বলেও স্থানীয়রা মনে করেন।

ইতোপূর্বে ২০১২ সালে বান্দরবানের থানচি, রুমা, রাঙামাটির সাজেক, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি উপজেলায় খাদ্য সংকট দেখা দেয়। এসময় মে থেকে অক্টোবর- ছয় মাসের জন্য সাড়ে ছয় হাজার পরিবারকে একটি প্যাকেজের আওতায় খাদ্য সাহায্য দেয়া হয়। প্রতি মাসে পরিবার প্রতি ৫০ কেজি চাল, নগদ ১২শ’ টাকা, ৩ লিটার ভোজ্য তেল, গর্ভবতী মায়েদের জন্য ৬ কেজি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য, জুমের বীজ কেনার জন্য এককালীন পরিবারপ্রতি দুই হাজার টাকা দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: নোয়াখালীর দুটি পৌরসভায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলছে

/এইচকে/