বধ্যভূমিতে আছে শুধু নামফলক, নেই কোনও স্মৃতিস্তম্ভ

লক্ষ্মীপুরের বধ্যভূমিস্বাধীনতার ৪৫ বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর জেলায় মুক্তিযুদ্ধের সময়কার গণহত্যার সাক্ষী বধ্যভূমিতে রক্ষণাবেক্ষণে তেমন কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সীমানা প্রাচীর দিয়ে বধ্যভূমির জায়গা নির্দিষ্ট করে তাতে নামফলক বসানো হয়েছে ঠিকই। তবে সেখানে নির্মিত হয়নি কোনও স্মৃতিস্তম্ভ। বর্তমানে এটি ব্যবহৃত হয় গোচারণ ভূমি আর ঠিকাদারদের মাল রাখার জায়গা হিসেবে। ফলে এ এলাকার বর্তমান প্রজন্মের কাছে জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে যাচ্ছে অন্ধকারে।

আজ লক্ষ্মীপুর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় লক্ষ্মীপুর। এই দিনে মুক্তিযুদ্ধে স্মৃতি এই বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন লক্ষ্মীপুরবাসী।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ৯ মাসে লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিবাহিনী ১৯টি সম্মুখযুদ্ধসহ ৯০টি দুঃসাহসিক অভিযান চালায়। এপ্রিলের শেষ থেকে যুদ্ধে লড়তে থাকে এ এলাকার ১৭০০ মুক্তিসেনা। এসব যুদ্ধে সৈয়দ আবদুল হালীম বাসু, মনছুর আহমদ, আবু ছায়েদ, আবুল খায়ের, নজরুল ইসলাম, জয়নাল আবেদীন, আতিক, মোস্তাফিজুর রহমান, আলী আহাম্মদ (ইপিআর) সহ ৩৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। হানাদার বাহিনীর হাতে মারা যায় কয়েক হাজার মানুষ।

২০১১ সালের ১৪ ডিসেম্বর স্বাধীনতা ৪০ বছর পর লক্ষ্মীপুর শহরের মাদাম ব্রিজের পাশে থাকা বধ্যভূমিতে সীমানা প্রাচীর দিয়ে সংরক্ষণের প্রাথমিক পদক্ষেপ নেন লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র এম এ তাহের। প্রাচীর দিয়ে সংরক্ষরণের জন্য নামফলক দিয়ে উদ্বোধন করলেও চার বছর ধরে আর কোনও খবর নেই। এর আগে এই জায়গায় লক্ষ্মীপুর পৌরসভার পাবলিক টয়লেট ছিল। জায়গাটিকে প্রাচীর দিয়ে চিহ্নিত করা হলেও আজ এখনও সেখানে নির্মাণ হয়নি কোনও স্মৃতিস্তম্ভ। কিংবা নির্মাণের কোনও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি।

লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালী রাস্তার পাশে অবস্থিত এই বধ্যভূমি। পাশে রয়েছে লক্ষ্মীপুর জেলার সাকির্ট হাউস, ডিসি অফিস, এসপি অফিস এবং লক্ষ্মীপুরের জেলা ও দায়রা  আদালত ভবন। কিন্তু কারও নজরে পড়ে না মুক্তিযুদ্ধেও স্মৃতি সম্বলিত এই স্থানটি। অযত্নে-অবহেলায় বধ্যভূমিতে স্থান হয়েছে ঠিকাদারদের ব্লক, মানুষের কাথাবালিশ, গরু-ছাগলের চারণভূমিতে। সিনেমা ও রাজনৈতিক পোস্টারে হারিয়ে গেছে বধ্যভূমির নাম ফলকটিও। ফলে এ জেলার বেশিরভাগ মানুষ এই বধ্যভূমিগুলো সম্পর্কে কিছুই জানে না।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার কাজল কান্ত দাস জানান, বধ্যভূমির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তার জানা নেই।

লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ তাহের বলেন, নিজ উদ্যেগে বধ্যভূমি সংস্কার করে ভাস্কর্য নির্মাণ করে দেবেন তিনি।

আরও পড়ুন- 


এজাহার থেকে নাম তুলে নিতে সাঁওতালদের হুমকি এমপি সমর্থকদের

/এসটি/