সীমাহীন দুর্ভোগে কুমিল্লা নগরীর মানুষ

comilla-city-picসামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা, খানা-খন্দে ভরপুর রাস্তাঘাট, যত্রতত্র ময়লা আবর্জনার ভাগার, সরু রাস্তা ও অধিকাংশ সড়কবাতি নষ্ট হওয়ায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন কুমিল্লা নগরীর অধিকাংশ মানুষ। এসব সমস্যা স্থায়ীভাবে সমাধানের তেমন কোনও উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
এছাড়া গত এক সপ্তাহ ধরে সাপ্লাই পানিতে ময়লা আবর্জনা, সুপেয় পানি ও গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে আবাসিক এলাকায় মাদকের ছড়াছড়িতে সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত অবিভাবকরা। অবশ্য এসব সমস্যা পুরোপুরি সমাধান না করতে পারলেও সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার দাবি নগরীর বিশিষ্ট ব্যাক্তিদের।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, জলাবদ্ধতা, খানা-খন্দে ভরপুর রাস্তাঘাট যুক্ত এলাকা শাসনগাছার অপর নাম দুর্ভোগ। তাছাড়া নগরীর অধিকাংশ রাস্তার ইটের সুরকি উঠে খানা-খন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এতে যান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে।
এছাড়া সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে আবাসিক এলাকার অধিকাংশ রাস্তায়। যানচলাচল ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি হেঁটে যেতেও বেগ পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের। অন্যদিকে আশপাশের গলির ভেতর রাস্তার পানি প্রবেশ করায় বাসিন্দাদের দুর্ভোগের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।
বর্তমানে এ অবস্থা বিরাজ করছে নগরীর শাসনগাছা এলাকা, জেলা প্রশাসকের বাসভবন সড়ক, পুলিশ সুপারের বাসভবন, মহিলা কলেজ রোড, দক্ষিণ চর্থা ইবনেতাইমিয়া স্কুল রোড, ইপিজেড এলাকা, দক্ষিণ চর্থা বড় পুকুরর পাড়, উত্তর চর্থার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কসহ নগরীর বিভিন্ন নিচু এলাকায়।
তবে স্থানীয়রা জানান, উল্লেখিত রাস্তার অবস্থার বেহাল দশা হলেও দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে নগরীর প্রধান প্রধান কিছু সড়ক, যা নগরবাসীর কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। এছাড়া ছোট ছোট বেশ কয়েকটি রাস্তার সংস্কার কাজ হয়েছে, সেইগুলোও নিম্নমানের।Comilla-city-pic-1
অন্যদিকে অপরিকল্পিত ডাস্টবিনের কারণে যত্রতত্র ময়লার ভাগার দেখা গেছে নগরীর অধিকাংশ ওয়ার্ডে। নিয়মিত ও সঠিক সময় পরিষ্কার না করায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বেশিরভাগ ময়লাই সড়কে উপচে পড়ছে, কিন্তু দেখার কেউ নেই।
নগরীর বাগিচাগাঁওয়ের বাসিন্দা মো. শাহাজান জানান, সিটি করপোরেশনের সাপ্লাই পানিতে গত এক সপ্তাহ ধরে ময়লা আবর্জনা রয়েছে। পানির ট্যাপ ছাড়লেই বেরিয়ে আসে বালুযুক্ত পানি যা ব্যবহারের অযোগ্য। এছাড়াও সুপেয় পানি ও গ্যাসের তীব্র সংকট দীর্ঘদিনের।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আশিকুর রহমান জুয়েল জানান, গত ১০ বছরে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন ২৭টি ওয়ার্ডের রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ও নর্দমার দৃশ্যমান কিছু উন্নয়ন হয়েছে যা নিম্নমানের ও সর্বমহলে প্রশ্নবিদ্ধ। এছাড়া স্থায়ীভাবে কোনও উন্নয়ন কাজ হয়নি। ডিজিটাল লাল, নীল লাইট স্থাপনে নগরবাসীর মনে দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখিয়েছেন মেয়র। কিন্তু নগরীর দীর্ঘ মেয়াদী জলাবদ্ধতা, খানা-খন্দে ভরপুর রাস্তাঘাট, যত্রতত্র ময়লা আবর্জনার ভাগার, ও খেলার মাঠসহ শত সমস্যা এখনও তিনি সমাধান করতে পারেননি।
কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও লেখক আবুস হাসানাত বাবুল জানান, মেয়র মনিরুল হক সাক্কু গত ৫ বছরে যা উন্নয়ন করে সবগুলো অতীত হয়েছে। বর্তমানে তিনি আবার নতুন ভাবে কুসিকের মেয়র হয়েছে। আমরা আশা করবো কুমিল্লা নগরীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা ধারাবাহিকভাবে সমাধান করবেন।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ‘নগরীর জলাবদ্ধতা ও পানি নিষ্কাশনের জন্য জাইকা থেকে ৪৬ কোটি টাকা পেয়েছি। ঈদের পরপরই ড্রেন ডাস্টবিনের সমস্যা সমাধানে কাজ শুরু করবো। রাস্তাঘাটে খানা-খন্দ, সরু রাস্তা মেরামতে আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। তবে নগরীর যানজট সমস্যা সমাধান করতে ঈদের পর সর্বস্তরের নাগরিক ও পরিবহন নেতাদের নিয়ে বসে সমাধানের চেষ্টা করবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিশু কিশোরদের বিনোদনের জন্য সিটি পার্ক তৈরি করেছি। নগরীর পুরাতন গোমতীকে হাতিরঝিল ও নানুয়াদীঘির পাড়কে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে তৈরির প্রস্তুতি চলছে। নগরীতে খেলার মাঠ ও নিম্নবিত্তদের সন্তানদের লেখাপড়ার বিশেষ কোনও সুযোগ নেই। সেই সমস্যাগুলো সমাধানে আমরা কাজ করছি।’
/এআর/