ফাঁকা শহরে পুনরায় বাড়ছে কোলাহল

বন্দর নগরীতে ফিরছেন মানুষ (ছবি রবিন চৌধুরী)ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে নগরীতে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। ফলে আবারও কর্মমুখর হয়ে উঠছে বন্দর নগরী চট্টগ্রাম। অভিযোগ রয়েছে অন্যান্য বছরের মতো এবারও ফেরার সময় যাত্রীদের দ্বিগুন-তিনগুণ ভাড়া গুণতে হচ্ছে। তবে আসার পথে যানজটসহ বড় কোনও দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে না নগরবাসীকে। পর্যাপ্ত পরিবহন ব্যবস্থা ও সড়ক সম্প্রসারণ করায় এবার গ্রামকে আপাতত বিদায় দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে ফিরছেন নগরবাসী।

এদিকে মানুষ নগরে ফিরতে শুরু করলেও এখনও নগরীর অধিকাংশ মার্কেট, দোকানপাট, শপিং মল, বিপনিবিতান বন্ধ রয়েছে। তবে রবিবার অফিস আদালত খোলার পর সোমবার থেকে শপিং মল ও মার্কেটগুলো নিয়মিত খোলা থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

Ctg_Photo (6)ঈদ উপলক্ষে গত ২৪ জুন সরকারি ছুটি শুরু হয়। এর দুইদিন আগে বৃহস্পতিবার থেকে নগরী ছাড়তে শুরু করে মানুষ। ঈদের দুইদিন আগে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও ছুটি শুরু হয়। এতে গত কয়েক দিন নগরী জনশূন্য হয়ে পড়ে। সোমবার ঈদ উদযাপনের পর বুধবার থেকে আবারও নগরবাসী চাকরির গন্তব্যে ফিরতে শুরু করেছে। বুধবার অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রবিবার থেকে অফিস আদালতে পুরোদমে দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু হবে। তখন পুনরায় স্বরূপে ফিরবে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। নগরীতে বাড়বে আগের মতো কোলাহল। বাড়বে যানজটের অসহ্য যন্ত্রণাও।

বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর চট্টগ্রাম স্টেশনের গিয়ে দেখা গেছে, দুপুর ১টার দিকে সোনার বাংলা এক্সপ্রেস স্টেশনে এসে পৌঁছায়। ফ্ল্যাটফর্মে থামতেই একে একে নামতে থাকেন বন্দর নগরী ফেরত যাত্রীরা। তবে এ দিন নগর ফেরত যাত্রীদের তেমন কাউকে ট্রেনের ছাদে করে আসতে দেখা যায়নি।

Ctg_Photo (10)কথা হয় ট্রেনে আসা সাহেদুল ইসলাম নামে এক যাত্রীর সঙ্গে। পুরো পরিবার নিয়ে ট্রেন থেকে নামেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি সড়ক ও জনপদ বিভাগে কাজ করেন। পরিবার নিয়ে নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় থাকেন। গত ২৪ জুন ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার আগে তিনি পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি যান। রবিবার থেকে অফিস শুরু তাই আজ  আবার নগরীতে ফিরে এসেছেন।

একই অবস্থা বাস টার্মিনালগুলোতে। নগরীর একে খান, অলংকার মোড়, বিআরটিসি, কালুরঘাট বাসস্টান্ড সবখানে গ্রাম ছেড়ে আসা নগর ফেরত যাত্রীর ভিড়। নগরীর একে খান এলাকায় ফেনী থেকে আসা এক যাত্রীর সঙ্গে কথা হয়। আবু নাছের নামে ওই যাত্রী জানান, ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। বুধবার থেকে অফিস চালু হয়েছে। একদিন বাড়তি ছুটি ভোগ করেছি তাই আজ  নগরীতে পুনরায় ফিরে আসলাম।

তিনি আরও জানান, আসার পথে মহিপালে স্টার লাইন কাউন্টারে তাকে নূন্যতম এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে টিকিট কাটতে হয়েছে। ওই কাউন্টারে চট্টগ্রামগামী যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড়।

Ctg_Photo (2)এদিকে দূরপাল্লার বাসগুলোর বিরুদ্ধে যাত্রীদের কাছ থেকে ক্ষেত্র বিশেষে দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেছেন নগরীতে ফিরে আসা যাত্রীরা। বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজার থেকে নগরীতে আসেন ইমতিয়াজ মাহমুদ। তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে কক্সবাজার বেড়াতে গিয়েছিলাম। যাওয়ার সময়ও বাড়তি ভাড়া গুণতে হয়েছে। এখন আসার সময়ও একই অবস্থা। অন্য সময় কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে আসতে ভাড়া লাগে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কিন্তু আমাকে আসতে হল সাড়ে ৩শ’ টাকা ভাড়া দিয়ে।

তিনি বলেন, ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ নিয়ে গাড়িটি বিরতিহীনভাবে চট্টগ্রামে আসার কথা থাকলেও পুরো রাস্তায় থেমে থেমে যাত্রী নিয়েছে। এতে যাতায়াতে সময় লেগেছে বেশি। যাত্রীরা এর প্রতিবাদ করলেও গাড়ির চালক কারও কথা আমলে নেয়নি।

একই ধরনের অভিযোগ করেছেন, কুষ্টিয়া থেকে আসা নগরীর একটি টাইলসের শো-রুমের বিক্রয় প্রতিনিধি নাজমুল হাসান জন। তিনি জানান, স্বাভাবিকভাবে কুষ্টিয়া থেকে চট্টগ্রাম আসতে যাতায়াত খরচ বাবদ ৮০০ টাকা খরচ হয়। কিন্ত ঈদের সপ্তাহ খানেক আগ থেকে এই রুটে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা ভাড়া নিচ্ছে এই পরিবহনগুলো। গন্তব্যে পৌঁছানোর তাড়া আর রাস্তায় যাত্রী সংখ্যা বেশি থাকায় সবাই বিষয়টি মেনে নিচ্ছে।

ছবি: রবিন চৌধুরী
/বিএল/