কনস্টেবল পারভেজের উপস্থিত বুদ্ধিতে রক্ষা পেলো খাদে পড়া বাসের যাত্রীরা

কনস্টেবল পারভেজের উপস্থিত বুদ্ধিতে রক্ষা পেলো অর্ধশতাধিক যাত্রী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দির গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ডের পার্শ্ববর্তী ডোবায় হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যায় ঢাকা থেকে মতলবগামী ‘মতলব এক্সপ্রেস’ বাসটি। ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজন যখন দাঁড়িয়ে দুর্ঘটনাটি ক্যামেরাবন্দি করতে ব্যস্ত, ঠিক তখন দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার কনস্টেবল পারভেজ মিয়া জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ময়লা পানিতে লাফিয়ে পড়েন। প্রথমে তিনি দ্রুত গাড়ির জানালার গ্লাসগুলো ভেঙে দেন। যাতে সহজে গাড়ির ভেতরে থাকা যাত্রীরা বেরিয়ে আসতে পারেন। কনস্টেবল পারভেজের উপস্থিত বুদ্ধিতে বাসে আটকা থাকা ২৫-২৬ জন যাত্রীর জীবন বাঁচে।
শুক্রবার (৭ জুলাই) দুপুরে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। এসব যাত্রীর জীবন বাঁচিয়ে শুকরিয়া প্রকাশ করেছেন কনস্টেবল পারভেজ মিয়া। তিনি বলেন, ‘যাত্রীবাহী বাসটি ময়লা নর্দমায় পড়ে যাওয়া পর সবাইকে উদ্ধার করতে পেরেছি সেটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় বিষয়। তবে দুঃখজনক হলো এমন বিপদের সময়ও সাধারণ মানুষ ব্যস্ত বা দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ির ছবি ও ভিডিও করতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেখলাম কেউ এগিয়ে আসছেন না। তখনই আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই নর্দমায় লাফিয়ে পড়ি। গাড়ির ভেতর আটকা পড়া ২৫-২৬ যাত্রীকে গ্লাস ভেঙে উদ্ধার করি। উদ্ধারের শেষ পর্যায়ে ৫ বছরের একটি শিশু সন্তাকেও পানির নিচ থেকে দ্রুত উদ্ধার করতে পেরেছি। এরপর ওই নর্দমায় ডুব দিয়ে খুঁজে দেখেছি আর কোনও যাত্রী আছে কিনা।’
স্থানীয়রা জানায়, দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে যেভাবে কনস্টেবল পারভেজ ঝাঁপিয়ে পড়ে যাত্রীদের উদ্ধার করেছেন তা অবিশ্বাস্য। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ময়লা পানিতে নেমে তাৎক্ষণিক যাত্রীদের উদ্ধারের ফলে কোনও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।
পাশ্ববর্তী পেন্নাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেলিনা আক্তার বলেন, ‘কনস্টেবল পারভেজের বুদ্ধিবলে রক্ষা পায় বাসে থাকা যাত্রীরা। গাড়িটি ডোবায় পড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ কনস্টেবল পারভেজ দ্রুত লাফিয়ে পড়েন। তিনি প্রথমে গাড়ির জানালার গ্লাসগুলো ভেঙে দেন যাতে করে ভেতরে আটকা পড়া যাত্রীরা সহজে বের হতে পারে। তাতে তিনি থেমে থাকেননি। পানির নিচে গাড়ির ভেতর থেকে বের করে আনেন সাত মাসের একটি শিশুকেও।’
দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘পারভেজের এ কর্মতৎপরতায় গর্বিত হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা। তার সাহসিকতায় কুমিল্লা রিজিয়ন হাইওয়ে পুলিশ সুপার পরিতোষ ঘোষ ১০ হাজার টাকা, স্থানীয় পেন্নাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পাঁচ হাজার টাকা পুরষ্কার ঘোষণা করেছেন।’
এ বিষয়ে কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশ সুপার পরিতোষ জানান, যাত্রীদের জীবন বাঁচাতে আমাদের পারভেজ ঝুঁকি নিয়ে যা করেছে তা হাইওয়ে পুলিশ বিভাগের জন্য গর্বের। পুরস্কার দিয়ে কাজের মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। তবুও এ কাজের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি যাতে তিনি রাষ্ট্রীয়ভাবে পান এ ব্যাপারে সুপারিশ করা হবে।

/এআর/এসটি/