ঘুরে দাঁড়াচ্ছে রাঙামাটির পর্যটন খাত

রাঙামাটির সাজেক ভ্যালিঘূর্ণিঝড় মোরা ও ভয়াবহ পাহাড় ধসের পর পর্যটন মৌসুমের শুরুতেই আবারও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে রাঙামাটির পর্যটন খাত। এতে খুশি এই খাতের ব্যবসায়ীরা। প্রতিটি হোটেল-মোটেলে রয়েছে পর্যটক, চলছে অগ্রিম বুকিং।

এদিকে পানিতে ডুবে থাকা রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতুটিও ভেসে উঠছে।  আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে সেতুটি  আরও দৃশ্যমান হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

গত আগস্ট মাস থেকে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি পায়।  গত বছরের তুলনায় এবছর বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় কাপ্তাই হ্রদের পানি কমানো সম্ভব হয়নি।  পানি বাড়ায় ডুবে যায় ‘সিম্বল অব রাঙামাটি’ খ্যাত আকর্ষণীয় ঝুলন্ত সেতুটিও।   

রাঙামাটির ছোট হরিনাশুক্রবার (১৭ নভেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এখনও সেতুর পাটাতনটি পানির নিচে। এর আগে ২০০৭ ও ২০১২ সালেও সেতুটি পানিতে ডুবে যায়।

রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক অলোক বিকাশ চাকমা বলেন, ‘এখন যেভাবে কাপ্তাই হ্রদে পানি কমছে, আশা করছি ২/৩ দিনের মধ্যে সেতুটি ভেসে উঠবে।  এই বছর ঘূর্ণিঝড় মোরা ও পাহাড় ধসের কারণে মানুষ রাঙামাটিতে সেভাবে আসে নি।  কিন্তু মৌসুমের শুরুতে পর্যটকরা যেভাবে বুকিং দিচ্ছেন, আশা করছি আবারও পর্যটকদের ঢল নামবে।’

কাপ্তাই হ্রদহোটেল প্রিন্স’র স্বত্বাধিকারী মো. নেছার উদ্দির বলেন, ‘আমার হোটেলে দেশি-বিদেশি প্রচুর গেস্ট আছে এবং আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বুকিংও রয়েছে।  ঘূর্ণিঝড় মোরা ও ভয়াবহ পাহাড় ধসের পর কয়েক মাস ব্যবসা হয়নি বললেই চলে। কিন্তু মৌসুমের শুরুতেই পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে, যা আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি।  আশা করছি গত বছরের চেয়ে এবছর পর্যটক অনেক বেশি হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের কারণে অনেকে সেদিকে না গিয়ে হ্রদ ও পাহাড়ের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে রাঙামাটিতে ছুটে আসবেন।’ 

রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতুপরিবেশবাদী সংগঠন গ্লোবাল ভিলেজের পরিচালক হেফাজত উল বারী সবুজ বলেন, ‘কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির পর থেকেই এর ময়লা-আবর্জনা পড়ছে হ্রদে।  ফলে এর নাব্যতা হ্রাস পেয়েছে।  যার কারণে পানির স্তর নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকলেও সেতুটি ডুবে যায়।  ২০০৭ সালে যখন সেতুটি প্রথম ডুবেছিল তখন থেকেই কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল সেতুটি নিয়ে ভাবার। সেই সময় তারা সেতুটি পাঁচ ফুট উঁচু করে সংস্কার করার কথা বললেও তা করেনি।  ফলে  হ্রদে পানি বাড়লে সেতুটি ডুবে যায়।  আর এতে করে একদিকে বছরের তিন চার মাস পর্যটকরা হতাশ হয়ে ফিরে যান।  অপরদিকে সরকারও রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়।’

রাঙামাটির সাজেক ভ্যালিকাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক আব্দুর রহমান বলেন, ‘হ্রদে স্বাভাবিক নিয়মে ৯০ এমএসএল পানি থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে পানি আছে প্রায় ১০৭ এমএসএল। ১০৯ এমএসএল সর্বোচ্চ সীমা। এ সীমা অতিক্রম করলে বিপদসীমার মধ্যে চলে আসে। তখন বাঁধ রক্ষায় অতিরিক্ত পানি স্পিলওয়ে দিয়ে ছেড়ে দিতে হয়।  কিন্তু বর্তমানেও স্পিলওয়ে দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ১৮ হাজার কিউসেক পানি ছাড়া হচ্ছে।’

আরও পড়তে পারেন:  পর্যটকদের বরণ করতে প্রস্তুত বান্দরবান