দুই দশকেও পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি শান্তিচুক্তির, হতাশ পাহাড়িরা

১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি সইআজ ২ ডিসেম্বর, ১৯৯৭ সালের এই দিনে পার্বত্য শান্তিচুক্তি সই হয়। এখনও সেই চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। ওই সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সঙ্গে শান্তিচুক্তি সই করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। পরের বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র সমর্পন করেন জনসংহতি সমিতির শীর্ষ নেতা জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমাসহ শান্তিবাহিনীর শতাধিক সদস্য। যে আশায় দুই দশক আগে চুক্তি সই হয়েছিল তা পূরণ না হওয়ায় হতাশ পাহাড়িরা। ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়াকে দুর্ভাগ্যজনক বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে।

পাহাড়ি নেতাদের অভিযোগ, চুক্তির দুই দশক পেরিয়ে গেলেও পাহাড়ে ফিরে আসেনি প্রত্যাশিত শান্তি। হত্যা ও অপহরণ এখনও চলছে। ভূমি বিরোধের নিষ্পত্তি হয়নি।

১৯৯৮ সালে অস্ত্র সমর্পণ অনুষ্ঠান

খাগড়াছড়ির সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মনীন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, ‘চুক্তির অনেক কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। অনেকে তাদের ভূমি ফেরত পাননি। জেলা পরিষদে পুলিশসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ দফতর হস্তান্তর করা হয়নি।’

কৃষ্টি চাকমা নামের এক ছাত্রী বলেন, ‘যেআশা নিয়ে শান্তি চুক্তি করা হয়েছে, তা এখন হতাশায় নিমজ্জিত। কারণ চুক্তির বেশির ভাগই বাস্তবায়ন করেনি সরকার।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অস্ত্র সমর্পণ করছেন সন্তু লারমা

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা) গ্রুপের সভাপতি সুধাসিন্ধু খীসা জানান, চুক্তি নিয়ে তারা খুব আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু দুই দশকেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। বিশেষ করে ভূমি বিরোধের নিষ্পত্তি হয়নি। চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের ইচ্ছার অভাব আছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

তবে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী বলেন, ‘হতাশ হওয়ার কিছু নেই। সরকার গত ২০ বছরে চুক্তির বেশিরভাগই বাস্তবায়ন করেছে। চুক্তি বাস্তবায়নের কারণেই আজ  আমি চেয়ারম্যান। পার্বত্য মন্ত্রণালয়, আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সে পাহাড়িরা প্রতিনিধিত্ব করছে। সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছে। জনগণ শান্তিতে বসবাস করছে।’ 

Shanti-Chukti-01

এ ব্যাপারে খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, ‘সরকার সব সময় চুক্তি বাস্তবায়নে আন্তরিক ছিল, এখনও আছে। সরকারের আন্তরিকতার কারণে আজ অনেকে সম্মান নিয়ে জীবন যাপন করছেন। যারা শুধু সমালোচনা করছেন, তারাও পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়নের কারণে মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপের কারণে আজ পাহাড়ে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। তবে কয়েকটি বিষয় এখনও সমাধান হয়নি।’ পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি নিয়ে যে বিরোধ আছে, তারও সমাধান করা হবে বলেও জানান তিনি। 

Shanti-Chukti-03

জেলা প্রশাসক মো. রাশেদুল ইসলাম জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘৭০ ও ‘৮০ দশকের রক্তক্ষয়ী সংঘাত, খুন, হত্যা, অপহরণ, গুম ও বিরোধ মিটিয়ে স্থায়ী শান্তি ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে শান্তিচুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। অস্ত্র সমর্পণের মধ্য দিয়ে জনসংহতি সমিতির সদস্যরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। এরপর সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। পার্বত্য চট্রগ্রাম এখন পর্যটনের জন্য বিখ্যাত। স্থানীয়রাও বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সুবিধা ভোগ করছে।

ছবি: প্রতিনিধি