সরেজমিনে দেখা যায়, রসূলপুর বধ্যভূমিতে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভের টাইলস ভেঙে পড়ছে। সীমানা প্রাচীর ভেঙে পড়ে আছে। বধ্যভূমির জায়গা খুবই সংকীর্ণ। নকশা অনুযায়ী স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে ওঠেনি। স্মৃতিস্তম্ভে পতাকা উত্তোলনের বেদিও স্থাপন করা হয়নি। স্থানীয়রা সেখানে গরু, ছাগল ও ভেড়া বেঁধে রাখে। খড়-কুটা এমনকি কখনও কখনও ধানও শুকানো হয়। মাদকসেবীরা মাদক সেবন করে। বখাটেদের আড্ডাবাজির স্থান হয়ে উঠেছে বধ্যভূমিটি।
কৃষক মফিজুল ইসলাম (৬৫) বলেন, ‘আমার বাড়ি বধ্যভূমির পাশেই। সংগ্রামের সময় আমি আড়ালে থেকে দেখেছি কিভাবে দলে দলে তরুণ-তরুণীদের এখানে এনে গুলি করে হত্যা করা হতো। গুলি করার আগে তাদের হাতেই কবর খোঁড়া হতো। তাদেরকে পশ্চিমমুখী করে গুলি করে পা দিয়ে লাথি মেরে কবরে ফেলতো। তারপর কোনোভাবে মাটি চাপা দিত। কয়েকদিন পর কুকুর মরাদেহগুলোর হাত-পা এবং শরীরের বিভিন্ন অংশ নিয়ে এদিক সেদিক ছোটাছুটি করতো। সংগ্রাম শেষ হওয়ার অনেক বছর পর এখানে স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মাণ করা হয়। চারদিকে সীমানা প্রাচীর না থাকায় নেশাখোররা এখানে নেশা করে। এমনকি মানুষ বিভিন্ন কাজে স্থানটি ব্যবহার করছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর যদি এখানে স্বাধীনতা দিবস এবং বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান করা যেত থাহলে বধ্যভূমির মর্যাদা ও চেতনা সম্পর্কে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ধারণা পেতো।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কাজী আমান উল্লাহ সর্দার বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযুদ্ধা হিসেবে দাবি জানাই সরকার যেন খুব শিগগিরই রসূলপুর বধ্যভূমিকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়।বধ্যভূমির চারপাশে সীমানা প্রাচীর নির্মাণসহ একজন করে পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগের দাবি জানান এই মুক্তিযোদ্ধা।
কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সফিউল আহম্মেদ বাবুল বলেন, ‘রসূলপুর বধ্যভূমির অনেক লম্বা ইতিহাস আছে। প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষের বধ্যভূমি হলো রসূলপুর বধ্যভূমি।’ স্মৃতিস্তম্ভে নামফলক বসানো এবং স্থানীয়রা বধ্যভূমিকে যেন ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য নিরাপত্তাকর্মী, নিয়মিত পুলিশ টহলের দাবি জানান তিনি।