৮ ডিসেম্বর বিনা যুদ্ধে শত্রুমুক্ত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া

৮ ডিসেম্বর বিনা যুদ্ধে শত্রুমুক্ত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়াআজ ৮ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বিনাযুদ্ধে শত্রুমুক্ত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর। ওই দিন মুক্তিবাহিনী ও মিত্র বাহিনীর উপস্থিতিতে স্বজন হারানোর ব্যাথা ভুলে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে বিজয় উল্লাসে মেতে উঠেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আপামর জনতা। দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন, জেলা আওয়ামী লীগ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠন দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা জেলা কমান্ডার হারুন অর রশিদ এবং যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক  আল মামুন সরকার জানান, মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাঞ্চলীয় জোনের প্রধান চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা জহুর আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে এ অঞ্চলে যুদ্ধ চলে। ‘৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর আখাউড়া সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হয়। এর পর মুক্তিবাহিনীর একটি অংশ দক্ষিণ দিক থেকে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে এবং মিত্র বাহিনী আখাউড়া-ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেল লাইন ও উজানিসার সড়ক দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে অগ্রসর হতে থাকে।

শহরের চারপাশে মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনীর শক্ত অবস্থান থাকায় পাকিস্তানি বাহিনী পালিয়ে যেতে শুরু করে ৬ ডিসেম্বর থেকে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর ছেড়ে যাওয়ার আগে তারা রাজাকারদের সহায়তায় ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। ওই দিন তৎকালীন ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজের অধ্যাপক কে এম লুৎফুর রহমান, সরাইলের বুদ্ধিজীবী আকবর হোসেন বকুল মিয়াসহ কারাগারে আটক থাকা অর্ধশত বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মানুষকে চোখ বেঁধে শহরের কুরুলিয়া খালের পাড়ে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। শুধু তাই নয়, শহর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যরা কলেজ হোস্টেল, অন্নদা স্কুল বোর্ডিং, বাজার ও গুদামসহ বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ করে। ৭ ডিসেম্বর রাতের আঁধারে পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর ছেড়ে আশুগঞ্জের দিকে পালাতে থাকে। ৮ ডিসেম্বর বিনা বাধায় বীর মুক্তিযোদ্ধারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে প্রবেশ করেন। এসময় সাধারণ মানুষ ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে মুক্তিবাহিনীকে অভিনন্দন জানান। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ভয়ে যারা এতদিন বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে আত্মগোপনে ছিলেন তারাও নির্ভয়ে শহরে আসতে থাকেন।

সেদিনকার ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা এখনও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তারা জানান, একাত্তরের ৮ ডিসেম্বর সকাল ৯টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তৎকালিন কোর্ট বিল্ডিংয়ে (বর্তমান পুরাতন কাচারির সামনে) স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলন করা হয়। এসময় প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আলী আজম ভুইয়া, লুৎফুল হাই সাচ্চু, মাহবুবুল হুদা, আবদুল ওয়াহিদ খান লাভলুসহ মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা ফিরোজ আহমেদ, সুবোধ চন্দ্র দাস, আবু সামা, রামরাল সাহা আক্ষেপ করে জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কুরুলিয়া খালের পাড় যেখানে অসংখ্য বুদ্ধিজীবী,মুক্তিযোদ্ধাসহ সাধারণ মানুষ হত্যা করা হয়েছে সেই স্থানটি এখনও অবহেলায় পড়ে আছে। একইভাবে পৈরতলা রেললাইনের পাশে, যেখানে ৩৭ জন মুক্তিযোদ্ধাকে নির্মমভাবে হত্যা করে মাটিচাপা দেওয়া হয়। সেই স্থানটিও চরম অযত্নে অবহেলায় পরে আছে। এগুলো সংরক্ষণের কোনও উদ্যোগ এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। দেশের এই বীর সন্তানেরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মৃত্যুর আগে যেন এই স্থানগুলোয় শহীদদের স্মরণে স্মৃতি স্তম্ভ দেখে যেতে পারেন সকারের কাছে সেই চাওয়া তাদের।