প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের আমরা সঠিক কাজে লাগাতে পারছি না: প্রণব মুখার্জি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক পাওয়া সম্মানসূচক ডি.লিট ডিগ্রি প্রদান অনুষ্ঠানে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিপ্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের আমরা সঠিক কাজে লাগাতে পারছি না বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। তিনি বলেন, ‘প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশের জন্য গবেষণার দরকার। কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থীরা  গবেষণার কাজে আগ্রহী হচ্ছেনা।’

মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রণব মুখার্জীকে সম্মানসূচক ডি.লিট ডিগ্রি প্রদান করতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

তিনি বলেন,‘ গত শতাব্দীতে ভারতবর্ষ থেকে খুব বেশি স্কলার নোবেল পুরস্কার পাননি। একেবারে পাননি এমনও নয়। গত ১০ থেকে ১৫ বছরে ৩-৪ জন নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তবে তারা নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ভারতের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করে নয়,বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করে। এদের কেউ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়,কেউ ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় আবার কেউ এমআইটিতে কাজ করেছেন।’ 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক পাওয়া সম্মানসূচক ডি.লিট ডিগ্রি প্রদান অনুষ্ঠানে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিপ্রণব মুখার্জী বলেন,‘ভারত উপমহাদেশে অখণ্ড ভারতবর্ষে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন আমরা এই পরিবেশ তৈরি করতে পারবো না? কখনও এখানকার সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীটি যেন বড় মাইনের চাকরির পেছনে না ছোটে। শিক্ষার্থীটি স্যারের কাছে গিয়ে যেন বলে  স্যার, আমি গবেষণা করতে চাই।’ 

ভারতের সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন,‘গবেষকদের উপযুক্ত সম্মানী দেওয়া সরকারের দায়িত্ব, সমাজের দায়িত্ব। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা এ পরিবেশ তৈরি করতে পারবো না  ততদিন আমরা পিছিয়ে থাকবো। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে রেটিং করে। ২০১২, ২০১৩ এবং ২০১৪ সালের বিশ্ববিদ্যালয়ের রেটিং দেখেছি। তাতে ভারতবর্ষের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পাইনি।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক পাওয়া সম্মানসূচক ডি.লিট ডিগ্রি প্রদান অনুষ্ঠানে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিতিনি বলেন,‘এখানকার প্রথম শ্রেণির প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীরা মোটা বেতনে বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কাজ করেন। এতে তার পরিবার, আত্মীয় স্বজন, ছেলে-মেয়েরা উপকৃত হয়। কিন্তু সার্বিকভাবে দেশ লাভবান হয় না।’

বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ এবং আলোকিত মানুষ তৈরি করবে এই আশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, গবেষণার মাধ্যমে মেধাবীরা এমন কোনও তত্ত্ব আবিষ্কার করবে যার মধ্য দিয়ে মানব সমাজ উপকৃত হবে। বৃহত্তর মানবজাতি উপকৃত হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্রত ছিল বৈশ্বিকতা অর্থাৎ ইউনিভার্সালিজম। সারা দেশে, সারা পৃথিবীর শোষিত বঞ্চিত মানুষের মুক্তি। সেই মুক্তির কথা ভেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরাও নিশ্চয়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাগত বৈষম্য, ধর্মীয় বিভেদ, সাম্প্রদায়িকতা ভুলে চিন্তা, মনন, বিচার, বিশ্লেষণে সংকীর্ণ হবে না।’