আশুগঞ্জ ইউএনও’র বদলি আদেশ প্রত্যাহার দাবিতে বিক্ষোভ

সড়ক অবরোধআশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিরুল কায়ছারের বদলির আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মহাসড়ক অবরোধ করা হয়েছে। রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আশুগঞ্জ উপজেলায় বিক্ষোভ করা হয়। একই দাবিতে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। এছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্যের পক্ষ থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর ডিও লেটারও দেওয়া হয়েছে। 

২২ ফেব্রুয়ারি বিকালে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার (সার্বিক) মোমিনুর রশিদ আমিন স্বাক্ষরিত এক আদেশে আমিরুল কায়ছারকে বান্দরবান পার্বত্য জেলার আলীকদম উপজেলায় বদলি করা হয়। বদলির আদেশের খবরের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সমালোচনা শুরু হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ কাচারি পুকুর এলাকায় সরকারি জায়গা দখল করে গড়ে ওঠা স্থাপনা উচ্ছেদ করায় আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিরুল কায়ছারকে বদলি করা হয়েছে। তিনি ২০১৬ সালের ১২ জুন আশুগঞ্জে যোগ দেন।

২০১৭ সালের ১৫ জুলাই স্থানীয় জনগণের সুবিধা ও শহরের সৌন্দর্য্যবর্ধনের জন্য কাচারি পুকুরের চারপাশে রাস্তা তৈরির জন্য প্রায় অর্ধশতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করেন ইউএনও।  অভিযানে র‌্যাব, পুলিশ, স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ উপজেলা প্রশাসনের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। সেখানে দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল করিম খান সাজু, ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম স্বপন, আবুল খায়ের, আবুল হোসেন ও আব্বাস উদ্দিন খানের ভবনও ছিল। তখন তারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে উচ্চ আদালতের কাগজপত্র দেখান। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার দখলদারদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাকবিতন্ডা হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ তারপর থেকে অবৈধ কয়েকজন দখলদার ইউএনওকে অন্যত্র বদলি করার জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করে।

অনুসন্ধান করে জানা গেছে, দখলদারদের মধ্যে একজনের আত্মীয় দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা। বদলির পেছনে ওই কর্মকর্তার হাত রয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

আশুগঞ্জবদলির আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে রবিবার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ অংশে বিক্ষোভ করা হয়। পরে সংক্ষিপ্ত পথসভায় বক্তব্য রাখেন আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রেহেনা বেগম, জাগ্রত আশুগঞ্জবাসীর সদস্যসচিব ঈসা খান, আশুগঞ্জ ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সভাপতি মো. মোবারক আলী চৌধূরী, আশুগঞ্জ সুন্নি জামাতের সভাপতি মো. মহিউদ্দিন মোল্লা, আড়াইসিধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সেলিম মিয়া, সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন, চরচারতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউদ্দিন খন্দকার, তালশহর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সামা, লালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ম. ম আবুল খায়ের, শরীফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফ উদ্দিন চৌধুরী, তারুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইদ্রিস হাসান, মুক্তিযোদ্ধা শেখ মো. জসিম, আশুগঞ্জ উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শাহীন শিকদার, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান কবির। বক্তারা অবিলম্বে ইউএনওর বদলির আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানান।

সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা বলেন, ‘আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিরুল কায়ছারের সঙ্গে শুরু থেকে আমার সুসম্পর্ক ছিল। বর্তমানেও আছে। কোনও কারণ ছাড়া তার আকস্মিক বদলিতে আমি মর্মাহত। আমি তার বদলির আদেশ প্রত্যাহারের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর ডিও লেটার দিয়েছি।’

সড়ক অবরোধএদিকে দলীয় প্যাডে আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক হাজী মো. ছফিউল্লাহ মিয়া এবং যুগ্ম আহ্বায়ক আবু নাছের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কাছে চিঠি লেখেন। চিঠিতে তারা বদলির আদেশ প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানান।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্যাডে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কাছে লেখা চিঠিতে ডেপুটি কমান্ডার আবুল হাসেম আজাদ উল্লেখ করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিরুল কায়ছার মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনমান উন্নয়নে তার ভূমিকা প্রশংসনীয়। চিঠিতে তারাও বদলির আদেশ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান।

দুর্গাপুর ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউল করিম খান সাজু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কাচারি পুকুর পাড়ে আমাদের ভবনসহ অন্য মালিকদের ভবন আছে। উচ্চ আদালতের আদেশে ভবন ভাঙার বিষয়টি স্থিতাবস্থায় আছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে যখন আমাদের ভবন ভাঙার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট অভিযানে আসে, তখন আমরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। তারা আমাদের কোনও কাগজপত্র দেখতে চায়নি। এর বেশি আর কিছু বলতে চাইনা। তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো ছিল।’

আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিরুল কায়ছার বলেন, ‘বদলির আদেশ হাতে পেয়েছি। বদলি সরকারি চাকরিতে একটি চলমান প্রক্রিয়া। এখানে অন্য কিছু আছে কি-না আমি জানি না। তবে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয় নিয়ে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা একদিন আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। তখন আমি বলেছিলাম, বিষয়টি জেলা প্রশাসক অফিসের সরাসরি নির্দেশনায় হচ্ছে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মো. রেজওয়ানুর রহমান আশুগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বদলির প্রসঙ্গে বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে এটি চলমান প্রক্রিয়া। আজ না হয় কাল বদলিতো হতেই হয়।’   

কাচারি পুকুর পাড়ের অবৈধ স্থাপনাতবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে কাচারি পুকুর পাড়ের বেশ কিছু অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করা হলেও তিন প্রভাবশালীর অবৈধ স্থাপনা এখনও অপসারণ করা যায়নি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যোগদানের পর থেকে আশুগঞ্জে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন, বাল্যবিয়ে রোধ, আধুনিক উপজেলা পরিষদ মিলনায়তন ও বিভিন্ন রাস্তাঘাট নির্মাণ, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মান উন্নয়ন, প্রাথমিক পর্যায়ে বিদ্যালয়গুলোতে মিড ডে-মিল চালু, উপজেলা পরিষদে সিসি ক্যামেরা স্থাপন এবং পার্ক স্থাপনসহ উপজেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তিনি ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছেন।