উখিয়া-টেকনাফ ঘুরে দেখা যায়, শামলাপুর, লেদা, হ্নীলা, জাদিমুড়া, উচি প্রাং, হোয়াইক্যং, থ্যাইংখালি, বালুখালী, আঞ্জুমান পাড়া, মধুর ছড়া, কুতু পালং শূন্য রেখায় রোহিঙ্গারা বসতি রয়েছে। তাদের কারণে ওইসব এলাকার স্থানীয়দের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বেড়েছে জীবনযাত্রার ব্যয়। পরিস্থিতি এমন চললে মানবিক বিপর্যয় হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
জেলে কবির আহমেদ বলেন, ‘গত বছর আগস্টে রোহিঙ্গা আসা শুরু হলে স্থানীয় প্রশাসন নাফ নদীতে মাছ শিকার বন্ধ করে দেয়। এখন পর্যন্ত সেই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পরিবারে আমিসহ আরও ১০ সদস্য রয়েছে। চলতে এখন খুব কষ্টে হয়। তাছাড়া রোহিঙ্গাদের কারণে রিকশাও চালাতে পারছি না।’
মঙ্গলবার বিকালে টেকনাফের মাছ বাজারে কথা হয় শিক্ষক বশির আহমদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মানবিক দিক চিন্তা করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও এখন সবচেয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে স্থানীয়রা। শুধু ক্ষতি হচ্ছে তা নয়, তাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা আসার পর থেকে সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম দ্বিগুণ-তিনগুণ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে যে মাছ ১০০-২০০ টাকায় কেনা যেতো বর্তমানে তা কিনতে হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকায়। এমনকি বেড়েছে যাতায়াত খরচও। আগে টেকনাফ থেকে কক্সবাজারে যেতে সিএনজি ভাড়া নিতো ৬০০ টাকা। সেখানে এখন নিচ্ছে এক হাজার টাকা। এছাড়া বাজারে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, সবজির অস্বাভাবিক চাহিদার কারণে দাম আকাশচুম্বী।’
উখিয়ার মুদি দোকানদার শফিউল আজম বলেন, ‘স্থানীয়দের চেয়ে রোহিঙ্গারা আরও ভালো রয়েছে। তারা ক্যাম্পে থাকছে, ত্রাণ পাচ্ছে। আমরা কী পাচ্ছি? আমরাই বরং বেশি সমস্যায় আছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ পৌরসভা প্যানেল মেয়র আবদুল্লাহ মনির বলেন, ‘বাংলাদেশে আগে থেকে রোহিঙ্গাদের একটি চাপ ছিল। নতুন করে রোহিঙ্গারা আসায় শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ আমাদের জীবনযাত্রা এখন বিপর্যয়ের মুখে।’
প্রসঙ্গত, গত বছর ২৫ আগস্ট থেকে কক্সবাজারে আশ্রয় নেন লাখ লাখ রোহিঙ্গা। চলতি বছরের ২৪ মে পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে ১১ লাখ ১৭ হাজার ৫৭৫ জন রোহিঙ্গা রয়েছে। তবে জাতিসংঘ ও আইএমও হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখের বেশি।
আরও পড়ুন:
রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের যত খরচ