‘ঈদের আনন্দ চাই না, তনু হত্যার বিচার চাই’

সোহাগী জাহান তনু‘তনুকে ছাড়া আরেকটি ঈদ আসছে। এবারের ঈদুল আজহাসহ চারটি ঈদ যাবে। ঈদ আসে, ঈদ যায় আমাদের পরিবারের কোনও আনন্দ নেই। ঈদ এলেই মেয়ের কথা বেশি মনে পড়ে। এবারে কোরবানির ঈদ কুমিল্লাতেই করবো। আমাদের তেমন কোনও প্রস্তুতি নেই। আমরা ঈদের আনন্দ চাই না, মেয়ের খুনের বিচার চাই।’ কথাগুলো বলেছেন তনুর মা আনোয়ারা বেগম।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যার আজ সোমবার (২০ আগস্ট) ২৯ মাস পূরণ হলেও খুনিরা এখনও শনাক্ত হয়নি। খুনিরা চিহ্নিত না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন তনুর পরিবার এবং কুমিল্লার বিশিষ্টজনরা। তনুর পরিবার সন্দেহভাজন আসামিদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানিয়েছেন তারা।

তনুর মা বলেন, ‘আমার মেয়েকে অন্যায়ভাবে খুন করেছে, হত্যাকারীদের বিচার চায়াও কি অন্যায়? দীর্ঘদিন হয়ে গেল সিআইডি আমাদের কোনও খোঁ*জ নেয় না। কোন আশ্বাসের বাণীও নেই। তনুর বাবার শরীর ভালো নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গরিব বলে তনুর হত্যাকারীদের বিচার হচ্ছে না। এখন আল্লাহর কাছে বিচার দেওয়া ছাড়া কোনও পথ দেখছি না।’

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘সন্দেভাজন কয়েকজনের ডিএনও রিপোর্ট শিগগিরই পাবো বলে আশা করছি। এদিকে সন্দেহভাজন আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’

তনুর পরিবারের সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে একটি বাসায় টিউশনি করতে গিয়ে আর বাসায় ফিরেনি তনু। পরে তার স্বজনরা খোঁজাখুঁজি করে রাতে বাসার অদূরে সেনানিবাসের ভেতর একটি জঙ্গলে তনুর লাশ পায়। পরদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ ও ডিবির পর ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি কুমিল্লা। তনুর দুই দফা ময়নাতদন্তে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ফরেনসিক বিভাগ মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করেনি। শেষ ভরসা ছিল ডিএনএ রিপোর্ট। ২০১৭ সালের মে মাসে সিআইডি তনুর জামা-কাপড় থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে তিনজন পুরুষের শুক্রানু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। পরে সন্দেহভাজনদের ডিএনএ ম্যাচিং করার কথা থাকলেও তা করা হয়েছে কিনা- এ নিয়েও সিআইডি বিস্তারিত কিছু বলছে না। সর্বশেষ সন্দেহভাজন হিসেবে তিনজনকে ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোর থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সিআইডির একটি দল ঢাকা সেনানিবাসে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদ করা ব্যক্তিরা তনুর মায়ের সন্দেহ করা আসামি বলেও সিআইডি জানায়। তবে তাদের নাম জানানো হয়নি।