সম্প্রতি মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে টেকনাফ তুলাতুলী-দক্ষিণ লম্বরী সংলগ্ন সৈকতে ঝাউ বাগানে গিয়ে গাছ কেটে নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। দুর্বৃত্তরা গাছগুলো কেটে সরিয়ে নিলেও প্রমাণ হিসেবে রয়ে গেছে গাছের অসংখ্য গুঁড়ি। ঝাউ বাগানের ভেতরে গিয়ে দেখা গেছে সংঘবদ্ধ চক্র শতাধিক গাছ কেটে নিয়ে গেছে। সারিবদ্ধ গাছের মাঝে-মাঝে ফাঁকা হয়ে গেছে। পড়ে রয়েছে কেবল গাছের কাটা গুঁড়ি। গাছ কাটার চিহ্ন মুছতে কিছু কিছু গুঁড়ি আবার কৌশলে বালু দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে ঝাউ বাগানের এতগুলো গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে। তবে এসব রক্ষায় কেউ এগিয়ে আসেনি। বন বিভাগের লোকজন বা নিরাপত্তায় থাকা ব্যক্তিরাও চোরদের ধরতে কোনও পদক্ষেপ নেননি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সংঘবদ্ধ গাছ চোরদের সঙ্গে বনকর্মীদের সখ্যের কারণেই এই চুরি সম্ভব হয়েছে। বনকর্মী পরিচয়ে মোহাম্মদ সিরাজ নামে এক ব্যক্তি প্রতিটি গাছের জন্য ৫০০-১০০০ টাকা করে সংগ্রহ করে এসব গাছ কাটার সুযোগ করে দিচ্ছে। একটি চক্র কিছুদিন পর পর বনের গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন একই অভিযোগ করেন।
উপকূলের জেলে ও স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আলম আক্ষেপ করে বলেন, ‘সমুদ্র সৈকতের ঝাউ বাগানের গাছগুলো মানুষের জীবন রক্ষা করছে। সেই গাছগুলো কেটে নিয়ে যাওয়া ঘটনা খুবই দুঃখজনক। কারা কাটছে সেটি বন বিভাগের লোকজন জানে, কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।’
তবে গাছ চোরদের সঙ্গে নিজের সখ্যতার বিষয়টি অস্বীকার করে বনপাহারাদার কর্মী মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, ‘রাত-দিন না ঘুমিয়ে এই বনের ঝাউ গাছ রক্ষা করছি। সেখানে টাকা নিয়ে গাছ কাটতে সহায়তা করবো এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।’ তিনি উল্টো অভিযোগ করেন, স্থানীয়রাই বাগানের গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে এবং বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে।
বনবিভাগের টেকনাফ রেঞ্জের কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘মেরিন ড্রাইভে সৈকতের পাড়ে বেড়ে ওঠা ঝাউ গাছের বাগান ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে উপকূলের প্রতিরক্ষায় কাজে আসে। এসব গাছ কেটে ফেলার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিউল হাসান বলেন, ‘মেরিন ড্রাইভ সৈকতের ঝাউবনের গাছ কাটার খবর শুনেছি। এ বিষয়ে বনবিভাগকে খোঁজ নিতে বলা হয়েছে।’
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা হক মাহাবুব মোর্শেদ বলেন, ‘মেরিন ড্রাইভ সৈকতে ঝাউবাগানের গাছ কাটার খবর পেয়েছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
বনবিভাগ সূত্র জানায়, মেরিন ড্রাইভ সড়কে টেকনাফের শামলাপুর থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত সমুদ্র সৈকতের পাড়ে ১৯২ হেক্টর বালুচরে ৪ লাখ ৭৮ হাজার ঝাউগাছ লাগানো হয়। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে উপকূলীয় জনগণের সম্পদ রক্ষায় বনবিভাগ এসব ঝাউ গাছ লাগিয়েছিল।