খাগড়াছড়িতে আ. লীগ প্রার্থীর কোটি টাকার ঋণ, মামলায় এগিয়ে বিএনপি প্রার্থী

কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, শহীদুল ইসলাম ভুইয়া ফরহাদ ও সোলায়মান আলম শেঠ (ছবি– প্রতিনিধি)

কৃষি ও ব্যবসা থেকে আয় বেড়েছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৮ নম্বর আসন পার্বত্য খাগড়াছড়িতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি’র। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দেওয়া হলফনামায় কোনও ধরনের দায়-দেনা না থাকলেও পাঁচ বছরে পরে দায়-দেনা বেড়েছে তার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হলফনামায় দেওয়া তথ্যানুযায়ী পুবালী ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকে ১ কোটি টাকা দায় রয়েছে তার।

এদিকে, একই আসনে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মো. সোলায়মান আলম শেঠ সম্পদে এগিয়ে রয়েছেন। আর বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো: শহীদুল ইসলাম ভুইয়া ফরহাদ এগিয়ে রয়েছেন শিক্ষাগত যোগ্যতা ও মামলায়। ফরহাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএসএস (স্নাতকোত্তর) আর সোলায়মান আলম শেঠের শিক্ষাগত যোগ্যাতা উচ্চ মাধ্যমিক। ৮টি মামলা রয়েছে ফরহাদের বিরুদ্ধে।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য দাখিল করা হলফনামায় কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা উল্লেখ করেছেন, তার  পেশা ব্যবসা। শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক। তার বিরুদ্ধে কোনও মামলা নেই। তিনি আরও জানিয়েছেন, কৃষি থেকে তার বার্ষিক আয় ৩ লাখ টাকা, আর ব্যবসা থেকে ৫৫ লাখ। অন্যদিকে স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে অকৃষি জমির পরিমাণ গত পাঁচ বছরে ৬০ একর থেকে বেড়ে ৮৪ একরে দাঁড়িয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৫৫ লাখ টাকা বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে। হলফনামায় একটি নির্মানাধীন বাড়ির মূল্য দেখানো হয়েছে ৬৫ লাখ টাকা যা আগে ছিল ২০ লাখ টাকা। অন্যদিকে স্ত্রীর নামে নির্মাণাধীন বাড়ির মূল্য ২৫ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। তার নগদ টাকার পরিমাণ ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা, আর স্ত্রীর কাছে আছে ৩ লাখ টাকা। বর্তমানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা অর্থের পরিমাণ ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে ব্যাংকে জমা আছে ১৪ লাখ টাকা। স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের নামে ২৮ ভরি স্বর্ণের মূল্য দেখানো হয়েছে ১২ লাখ ১০ হাজার টাকা। ২টি প্রাইভেট কার ও ১টি ল্যান্ড ক্রুজারের দাম দেখানো হয়েছে ৮০ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে ও স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ আছে ১৪ লাখ টাকা। এছাড়াও ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান হিসেবে বছরে সম্মানী পেয়ে থাকেন ১২ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। অন্যদিকে সরকারি চাকরিজীবী স্ত্রীর বার্ষিক আয় ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৪৬৪ টাকা দেখানো হয়েছে।

মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করা হলফনামায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. সোলায়মান আলম শেঠ জানিয়েছেন, বর্তমানে তার বিরুদ্ধে কোনও মামলা চলমান নেই। পেশায় ব্যবসায়ী সোলায়মান আলম শেঠের বাড়ি ভাড়া থেকে বছরে আসে ৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় ৮ লাখ ৭৩ হাজার ৫৫৯টাকা, বন্ড ও ঋণপত্র খাতে ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা। নগদ টাকার পরিমাণ ১ কোটি ২৮ লাখ ২৬ হাজার ৫শ টাকা, আর বিভিন্ন ব্যাংকে নগদ টাকা জমা আছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৩৫৪ টাকা। এছাড়াও সম্মানী ভাতা বাবদ তার বার্ষিক আয় ১২ লাখ টাকা। হলফনামায় চারটি গাড়ির মূল্য হিসেবে ৬১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৮০ টাকা, নিবন্ধনহীন ৬টি কারের দাম ১ কোটি ৭৫ লাখ ৮৬ হাজার টাকা এবং একটি মারসিডিজ বেঞ্জ কারের দাম উল্লেখ আছে ৭৬ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়িতে পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত অকৃষি জমির দাম দেখানো হয়েছে ১৫ কোটি ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৮ টাকা। অন্যদিকে বিভিন্ন ব্যাংকে ৪ কোটি ৩৬ লাখ ৫৪ হাজার ৮৩৩ টাকা দায় দেখানো হয়েছে হলফনামায়।

অপরদিকে বিএনপি প্রার্থী মো. শহীদুল ইসলাম ভুইয়া ১১টি মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেও বর্তমানে তার বিরুদ্ধে ৮টি মামলা বিচারাধীন আছে, আর একটি মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। ফরহাদ বাড়ি ভাড়া বাবদ আয় করেন ৬ লাখ ৪৩ হাজার ৩৭৫টাকা। নিজের নামে সঞ্চয় পত্র/ব্যাংক আমানত ২ লাখ ২০ হাজার ৮শ টাকা। পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগের পরিমাণ ২২ লাখ টাকা, আর স্ত্রীর নামে সঞ্চয়পত্র রয়েছে ৪৫ লাখ টাকা। একটি মোটর গাড়ির দাম দেখানো হয়েছে ১২ লাখ টাকা। চাকরিজীবী স্ত্রীর বার্ষিক আয় ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৪শ টাকা। চট্টগ্রামে একটি দালানের দাম ৯৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা ছাড়াও অকৃষি জমির দাম ১১ লাখ ১৩ হাজার ৭৭১ টাকা। অন্যদিকে স্ত্রীর রয়েছে ৯ লাখ টাকা মূল্যের অকৃষি জমি। ব্যবসায়িক পুঁজি ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা বলে উল্লেখ আছে হলফনামায়।

অন্যদিকে নিজের নামে ৩৮ লাখ ৯৪ হাজার ৯০৮ টাকার পাশাপাশি স্ত্রীর নামে ২৫ লাখ ৬ হাজার ৯৯০ টাকা নগদ রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন বিএনপির এই প্রার্থী।