লংগদুর অগ্নিকাণ্ডের দুই বছর

ঘরে ফিরেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা, ফেরেনি আস্থা

লংগদুর অগ্নিকাণ্ড (ফাইল ছবি)রাঙামাটির লংগদুর তিনটি পাহাড়ি গ্রামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রায় দুই বছর পর ক্ষতিগ্রস্তরা নিজ ঘরে ফিরেছেন। তবে মন থেকে ভয় কাটেনি এখনও, ফিরে আসেনি বিশ্বাস ও আস্থা। ক্ষতিপূরণ হিসেবে সরকারি অনুদানে নির্মিত নতুন ঘরে ফিরতে পারায় স্বস্তি থাকলেও, আতঙ্কও আছে মনে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত বাঙালি মোটরসাইকেল চালক ও ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা নুরুল ইসলাম নয়নের লাশ জানাজার জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় ২০১৭ সালের ২ জুন পাহাড়িদের গ্রামে আগুন দেয় উত্তেজিত জনতা। এরপর প্রায় দুই বছর ধরে বিভিন্ন সরকারি আশ্রয়ণে বসবাস করতে হয়েছে ভুক্তভোগীদের। নয়ন হত্যাকাণ্ড এবং এর জের ধরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় স্থানীয় পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়। সেই দূরত্ব এখনও কমেনি। তবে তা কমানোর জন্য কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসন।লংগদুতে অগ্নিদুর্গতদের জন্য নির্মিত নতুন ঘর

ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত ১৭৬ পরিবারের জন্য বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। গত বছর ১ জুন এসব বাড়িঘরের নির্মাণ কাজ শুরু করে এই বছরের মার্চে ক্ষতিগ্রস্তদের তা বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

তবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষে বিত্র চাকমা বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত ১৮টি দোকান এখনও ক্ষতিপূরণ পায়নি। সরকার যদি আমাদের আরও একটি বছর রেশনের ব্যবস্থা করতো, তাহলে ভালো হতো। তবে এখন আমাদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে ।’লংগদুতে অগ্নিদুর্গতদের জন্য নির্মিত নতুন ঘর

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির লংগদু উপজেলার সাধারণ সম্পাদক মনি শংকর চাকমা বলেন, ‘এখানকার স্থানীয়রা যেভাবে বসবাস করতো, তা পুরো পার্বত্য এলাকার কোথাও ছিল না। একটি ঘটনায় প্রত্যেকের মধ্যে এখনও চাপা-আতঙ্ক বিরাজ করছে। যে বিশ্বাস ও আস্থা ভঙ্গ হয়েছে, তা এখনও কারও মধ্যেই পুরোপুরি ফেরেনি।’লংগদুতে অগ্নিদুর্গতদের জন্য নির্মিত নতুন ঘর

আটারকছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঙ্গল কুমার চাকমা বলেন, ‘পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে যে আস্থার সংকট ছিল তা অনেকটা কমে এসেছে। তবে সবার মধ্যে সম্প্রীতি তৈরি না হলে এই আস্থা বেশিদিন টিকবে না। দিন যত গড়াবে, সম্পর্ক তত মজবুদ হবে আশা করি।’ 

লংগদু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কুলিন মিত্র চাকমা (আদু) বলেন, ‘সরকার থাকার জন্য বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছে। এখন আমাদের সকলে মিলে সম্প্রীতির-বাড়ি নির্মাণ করতে হবে। এটি করা না গেলে এই ঘর নির্মাণের সুফল পাওয়া যাবে না ।’ 

অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া ঘরের টিন (ফাইল ছবি)

এদিকে পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা হয়েছে জানিয়ে লংগদুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রবীর কুমার রায় বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারিভাবে যে সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলো করা হচ্ছে, সেখানে পাহাড়ি-বাঙালি সবাই সমানভাবে অংশগ্রহণ করছেন। সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে সম্প্রীতি অটুট রাখার লক্ষ্যে প্রশাসন কাজ করছে।’ 

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১ জুন লংগদুর মোটরসাইকেল চালক ও লংগদু ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়নকে খাগড়াছড়ির চার মাইল এলাকায় দুর্বৃত্তরা হত্যা করে। পরের দিন ২ জুন বাইট্টাপাড়া থেকে তার লাশ নিয়ে লংগদু উপজেলা মাঠের দিকে আসার সময় বিক্ষোভ মিছিল থেকে পাহাড়ি তিনটি গ্রামে হামলা চালানো হয়। এসময় দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে অন্তত ২১৫ বাড়ি ও দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে পক্ষ থেকে প্রায় ৮শ’ লোককে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়।