রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিপদে উখিয়া ও টেকনাফবাসী

রোহিঙ্গা (ছবি: ফোকাস বাংলা)রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে উখিয়া ও টেকনাফবাসী এখন নিজেরাই বিপদে রয়েছেন। দখল হয়ে গেছে আবাদি জমি। বাড়ছে অপরাধ। এর মধ্য দিয়ে আজ পালিত হলো বিশ্ব শরণার্থী দিবস।

শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, ‘বর্তমানে নতুন ও পুরাতন মিলিয়ে উখিয়া-টেকনাফ দুটি উপজেলায় সর্বশেষ ১০ লাখের মতো রোহিঙ্গা রয়েছে। এখানেও শরণার্থী দিবস পালিত হয়েছে। জেলায় বিপুল পরিমাণ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়া স্থানীয়দের জীবন-যাপন প্রচণ্ড চাপে রয়েছে।’

টেকনাফের লবণ চাষি মোহাম্মদ ছুপি জানান, শাহপরীরদ্বীপ সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের তিনি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তার জমিতে থাকার ব্যবস্থা ও খাবার দিয়েছেন। কিন্তু, এখন তার মূল পেশা লবণ চাষ একদম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। 
মোহাম্মদ ছুপি বলেন, ‘আমাদের লবণের ক্ষেত ও চাষের জমি বলতে গেলে ওদের দখলে। আমার জমিতে রোহিঙ্গাদের দুইশ’ মতো পরিবার বাস করছে। লবণ চাষের সময়ে চাষ করতে পারিনি।আমার মতো অনেক মানুষ এই পরিস্থিতির শিকার।’ 
টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র আবদুল্লাহ মনির বলেন, ‘রোহিঙ্গারা কৃষি জমিতে আশ্রয় নেওয়ার কারণে অনেকের কৃষি কাজ বন্ধ রয়েছে। অর্থের অভাবে স্থানীয় শ্রমবাজারে সস্তায় কাজ করছেন রোহিঙ্গারা। যার ফলে স্থানীয় শ্রমবাজারে  স্থানীয়দের আর কাজ জুটছে না। এমনকি হত্যা ও মাদক পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়াচ্ছে রোহিঙ্গারা। ফলে এখানকার মানুষ ভয়ে জীবন-যাপন করছেন। কেননা স্থানীয়দের চেয়ে রোহিঙ্গাদের জনসংখ্যা এখানে দ্বিগুণ।’

দুই বছরে কত শিশু জন্ম?

কক্সবাজার সির্ভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে দুই বছরে প্রায় ৩৭ হাজার নারী অন্তঃসত্ত্বা ছিল। তার মধ্যে ৯ হাজার ৩৪৯ জন নারী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সন্তান প্রসব করেন। বাকিগুলো হোম ডেলিভারি হয়েছে। তবে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসার পর গত দুই বছরে শিবিরগুলোতে আনুমানিক ৫০ হাজারের মতো শিশুর জন্ম হয়েছে। 

পড়ে আছে প্রত্যাবাসন ঘাট 

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে চুক্তি অনুযায়ী কক্সবাজারের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও টেকনাফের কেরণতলী (নয়াপাড়া) প্রত্যাবাসন ঘাট দুটি পড়ে আছে। ঘুমধুম পয়েন্ট দিয়ে স্থলপথে এবং কেরণতলী পয়েন্ট দিয়ে নাফ নদী হয়ে নৌপথে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত পাঠানোর কথা ছিল।

এদিকে গত ১৪ বছর ধরেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বন্ধ রয়েছে।যারা এসেছে তাদের প্রায় কেউই এ সময়ে আর ফিরে যায়নি। ২০০৫ সালের জুলাই মাসে এক পরিবারের দুই সদস্য মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার পর থেকে কোনও রোহিঙ্গাই আর দেশে ফেরত যায়নি।

অপরাধে জড়িত

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানান, গত এক বছরে ইয়াবা বহন, সেবন ও কেনাবেচার অভিযোগে একশটি মামলায় দেড় শতাধিক রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া আগ্নেয়াস্ত্র ও ছুরিসহ আরও ২০ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পাড়ি দেওয়ার সময় গত দেড় বছরে প্রায় ৫৬ হাজার রোহিঙ্গাকে আটক করে ক্যাম্পে ফেরত আনা হয়েছে। তবে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ বাড়ার পর ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ ও ২০১৮ সালে অনেক বেশি ইয়াবার চালান ও পাচারকারী ধরা পড়েছে। গত এক বছরে কক্সবাজারে ১ লাখ ২০ হাজার ইয়াবাসহ ৪০ জনের মতো রোহিঙ্গা ধরা পড়েছে।এসব ঘটনায় ১৭টি মাদক মামলা দায়ের করে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান মুহিব উল্লাহ বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের বাড়ি নয়। আমরা চিরদিন বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবিরে থাকতে চাই না। আমরা নিজ দেশে ফিরতে চাই, তবে নাগরিক অধিকার, ধন-সম্পদসহ সবকিছু দিতে হবে।’ 
উখিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ আবুল খায়ের বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিবিরগুলো পাহাড়ের তীরে হওয়ায় বিশাল রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখা পুলিশের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে। এখানে অপরাধ প্রতিদিনই বাড়ছে।’

মিয়ানমারের রাখাইন থেকে বাংলাদেশে নতুন রোহিঙ্গা শরণার্থী আসা শুরু হয় ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে।