র্যাব-৭ এর অভিযানে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। অভিযানের সময় ওই ক্লাবে পাওয়া একটি রেজিস্টার খাতায় সর্বশেষ ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জুয়া খেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। যদিও বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ক্লাবটির পরিচালনার সঙ্গে জড়িতরা। তাদের দাবি— গত দেড় মাস ধরেই ক্লাবটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। বর্ষায় নালা বেয়ে ক্লাবে পানি ঢুকে যাওয়ায় সেখানে কেউ যেত না।
ক্লাব পরিচালনা কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বৃষ্টিতে ক্লাবে পানি জমে যেত, তাই গত দেড় মাস ধরে এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। তার আগে আমরা খসরু নামে একজনের কাছে ভাড়া দিয়েছিলাম। তিনি এটি পরিচালনা করতেন।’
কত টাকায় ভাড়া দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দৈনিক ১০ হাজার টাকায় ভাড়া দিয়েছিলাম। সেই হিসাবে মাসে তিন লাখ টাকা ভাড়া পেতাম। তবে ছয় মাস আগে তার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।’ ভাড়ার টাকা কোন কাজে খরচ করা হতো প্রশ্নে কোনও জবাব দেননি তিনি।
ঢাকায় জুয়া ও ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের মধ্যে শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর তিনটি ক্লাবে অভিযান চালায় র্যাব। প্রথমে নগরীর আইস ফ্যাক্টরি রোডের মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদে ঢুকে তল্লাশি করেন র্যাব সদস্যরা। একই সময় র্যাবের আরও দুটি দল সদরঘাট এলাকার মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব এবং হালিশহর এলাকায় আবাহনী ক্লাব লিমিটেড ঘিরে রাখেন র্যাব সদস্যরা। পরে একে একে সবকটিতে অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিজাম উদ্দিন।
অভিযানে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র ক্লাবে ক্যাসিনো খেলার সরঞ্জাম পেয়েছেন র্যাব সদস্যরা। ওই ক্লাবে ক্যাসিনো খেলার ঘর আঁকা একটি কাপড়ের পর্দা,ছয়টি চিপস, আটটি বোর্ড, দুটি দেশীয় অস্ত্র পাওয়া যায়। এছাড়া তল্লাশির সময় ওই ক্লাবে একটি রেজিস্টার নোট খাতা পাওয়া যায়। ওই খাতায় সর্বশেষ ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জুয়া খেলার হিসেবে রয়েছে। তবে অন্য দুটি ক্লাবে জুয়া খেলার তেমন কোনও সরঞ্জাম পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে মোহামেডান স্পোটিং ক্লাবে বিপুল পরিমাণ প্লেইং কার্ড পাওয়া যায়।
এ সর্ম্পকে জানতে চাইলে অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিজাম উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নগরীর বেশ কিছু ক্লাবে ক্যাসিনো সর্ম্পকিত অপরাধ সংগঠিত হয়ে থাকে— এমন সংবাদের কারণে আমরা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র,আবাহনী এবং মোহামেডান স্পোটিং ক্লাবে অভিযান পরিচালনা করি। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রে কিছু আলামত পেয়েছি, যেসব সরঞ্জাম ক্যাসিনোতে ব্যবহার হয়ে থাকে। কিছু চিপস পেয়েছি যেগুলো ক্যাসিনোর টেবিলে ব্যবহার হয়। এছাড়া, ক্যাসিনো খেলার নিয়মাবলী লেখা কিছু পোস্টার পেয়েছি। যেগুলো দেয়ালে সাটানো ছিল। কিছু খাতাপত্র পেয়েছি— ওই খাতায় জুয়া খেলার হিসাব রাখা হতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে এ ঘটনায় আমরা কাউকে আটক করতে পারিনি। একজন দারোয়ান ছিল তার মাধ্যমে আমরা এই ক্লাবে প্রবেশ করেছি। মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবে যে আলামতগুলো পেয়েছি, সেখান থেকে আমরা ধারণা করছি,এই ক্লাবে জুয়া বা ক্যাসিনো ধরনের অপরাধ সংগঠিত হতো।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক দোকানদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দুইদিন আগেও রাতে ক্লাবে লোকজনকে খেলতে আসতে দেখতাম। গত দুইদিন কাউকে দেখা যায়নি। এ দুইদিন রাতে ক্লাবে লাইট জ্বলেনি, অন্ধকার ছিল।’
এ সর্ম্পকে জানতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের কমান্ডার মো. সাহাবুদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম জেলা ইউনিট ক্লাবটি পরিচালনা করতো। তিন বছর আগে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল ক্লাবটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর সেখানে কী হয় বা হচ্ছে, সে ব্যাপারে আমরা কোনও খোঁজ খবর রাখতাম না।’