ইসির গলার কাঁটা আউটসোর্সিং কর্মীরা

জাতীয় পরিচয়পত্রনির্বাচন কমিশনের (ইসি) ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন মোস্তফা ফারুক। রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগে শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ইসির এই আউটসোর্সিং কর্মী পুলিশের কাছে রোহিঙ্গাদের ভোটার করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। ফারুক পুলিশকে জানিয়েছেন, জয়নাল আবেদিন নামে ইসির স্থায়ী এক কর্মী রোহিঙ্গাদের তার কাছে নিয়ে আসতেন। পরে তাদের ছবি তুলে, ডিজিটাল সিগনেচার প্যাডে সই নিয়ে এনআইডি উইংয়ে ওইসব তথ্য ইনপুট দিতেন তিনি। এরপর ঢাকায় প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত সত্য সুন্দর দেব এনআইডি প্রিন্ট দিয়ে তাদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন।

এর আগে, গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে ইসির হারানো একটি ল্যাপটপসহ ডবলমুরিং থানা নির্বাচন কর্মকর্তার অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদিনকে আটক করেন জেলা নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তারা। পরে এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। জয়নাল অপরাধ স্বীকার করে আরও কয়েকজনের তথ্য দিয়েছেন। তাদের অধিকাংশই নির্বাচন কমিশনে আউটসোর্সিং কর্মী হিসেবে নিয়োজিত বলে জানিয়েছে পুলিশ। ডাটা এন্ট্রি ও টেকনিক্যাল কাজে আউটসোর্সিংয়ের কর্মীদের নিয়োগ দেওয়া হতো। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই তারা অবৈধভাবে রোহিঙ্গাদের ভোটার করে আসছেন।

সর্বশেষ, রবিবার দুপুরে আরও চার ইসিকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে আনে নগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে আনা এই চারজনও নির্বাচন কমিশনে আউট সোর্সিং কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তারা হলেন– কোতয়ালি থানা নির্বাচন অফিসে কর্মরত ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ফাহমিদা ও শাহীন। ডবলমুরিং থানা নির্বাচন অফিসে কর্মরত ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পাভেল বড়ুয়া ও বন্দর থানা নির্বাচন অফিসে কর্মরত ডাটা এন্ট্রি অপারেটর জাহিদ।

জানা গেছে, আউটসোর্সিংকর্মীদের অস্থায়ী অথবা প্রকল্পকেন্দ্রীক নিয়োগ দেওয়া হতো। তাদের একদিকে বেতন কম, অন্যদিকে চাকরিও ছিল অস্থায়ী। তাই তারা এসব অবৈধ কাজে জড়িয়ে পড়ছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া তাদের বেতনও মাঝে-মধ্যে বকেয়া থাকতো বলে তারা জানান।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুনীর হোসাইন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আউটসোর্সিংয়ের কর্মীদের বেশির ভাগ ডাটা এন্ট্রি পর্যায়ে কাজ করেন। এ কারণে তারা কমিশনের টেকনিক্যাল যেসব বিষয় আছে, সেগুলো খুব ভালো জানেন। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু আউটসোর্সিং কর্মী রোহিঙ্গাদের ভোটার অন্তর্ভুক্ত করছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আউটসোর্সিং কর্মীদের দায়বদ্ধতা কম। তাদের চাকরি হারানোর ভয় নেই। যে কারণে তারা রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার মতো স্পর্শকাতর কাজ করতেও ভয় পাচ্ছেন না।’ তিনি ডাটা এন্টি অপারেটর পদে নিজস্ব কর্মী নিয়োগ দেওয়ার পরামর্শ দেন।

মুনীর হোসাইন বলেন, ‘ডাটা এন্ট্রি পর্যায়ের কর্মীরা নির্বাচন কমিশনের স্থায়ী কর্মী হলে চাকরি হারানোর ভয়ে তারা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করবেন না। সাময়িক লাভের জন্য কেউ চাকরি হারাতে চাইবেন না।’

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, বর্তমানে চট্টগ্রামের ২১ থানা ও উপজেলায় মোট ৪১ জন আউটসোর্সিং কর্মী কাজ করছেন। এই ৪১ জন কর্মীর সবাই ডাটা এন্ট্রির কাজ করেন। তাদের মধ্যে কর্ণফুলী উপজেলা ছাড়া অন্য ২০টি থানা ও উপজেলা নির্বাচন অফিসে দুজন করে মোট ৪০ জন কাজ করছেন। কর্ণফুলী উপজেলায় একজন কাজ করছেন।

এর বাইরে ভোটার তালিকা হালনাগাদ প্রকল্পের অধীনে আরও ৪৮ জন আউটসোর্সিং কর্মী চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কমিশনে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুনীর হোসাইন। তিনি জানান, ছয়টি ইউনিটে টেকনিক্যাল এক্সপার্ট, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, প্রুফ রিডারসহ আটজন করে আউটসোর্সিং কর্মী কাজ করেন।