সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার পরীক্ষার্থী নুসরাত গত ৬ এপ্রিল ওই মাদ্রাসাকেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে গেলে তাকে ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে তার মায়ের শ্লীলতাহানির মামলা তুলে না নেওয়ায় তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ৮ এপ্রিল নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাত মারা যান। এ ঘটনায় নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে মামলা করেন।
নুসরাতের ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান বলেন, ‘আমরা আপুকে ফিরে পাবো না। তবে দৃষ্টান্তমূলক সাজা হলে কিছুটা সান্ত্বনা পাবো। আপুর আত্মা শান্তি পাবে।’
মামলার বাদী নোমান বলেন, ‘অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়— এটা প্রমাণ হোক। রাষ্ট্র বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে দেশবাসীকে জানিয়ে দিক অপরাধ করে কেউ বাঁচতে পারবে না।’
নুসরাতে মা শিরিন আক্তার আশা করছেন রায় তাদের পক্ষে যাবে। তিনি বলেন, ‘অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌল্লাহসহ সব আসামির ফাঁসি চাই। এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ড যেন আর না হয়। আমার মতো আর কোনও মায়ের বুক যেন এভাবে খালি না হয়।’
নুসরাতের বাবা এ কে এম মুসা বলেন, ‘দেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর আমাদের আস্থা আছে। আদালত নুসরাতের খুনের সঙ্গে জড়িতদের এমন শাস্তি দিক যাতে আমরা একটি সান্ত্বনা নিয়ে বাঁচতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যায় জড়িত থাকার প্রমাণ দিতে পেরেছি। আশা করি আদালত থেকে নিহতের স্বজন, ন্যায় বিচার ও সন্তোষজনক রায় পাবে।’
বাদী পক্ষের আইনজীবী এম শাহজাহান সাজু বলেন, ‘প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজসহ ১৬ জন যে এই হত্যায় জড়িত এর প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। আশা করি রায়ে সব আসামির সর্বোচ্চ সাজা হবে।’
প্রসঙ্গত, ২৯ মে এ মামলার প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজসহ ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (পিবিআই)। ৩০ মে মামলাটি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। ১০ জুন আদালত মামলাটি আমলে নিলে শুনানি শুরু হয়। ২০ জুন অভিযুক্ত ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বিচারিক আদালত। ২৭ ও ৩০ জুন মামলার বাদী নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানকে জেরার মধ্য দিয়ে বিচার কাজ শুরু হয়। এরপর ৯২ সাক্ষীর মধ্যে ৮৭ জন সাক্ষ্য দেন আদালতে।
অভিযোগপত্র ভুক্ত ১৬ আসামি হলো, অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আবদুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আবদুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিল।