ওসি মোয়াজ্জেমের সর্বোচ্চ শাস্তি চায় নুসরাতের পরিবার

সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনযৌন হয়রানির অভিযোগ জানাতে গেলে তার ভিডিও ধারণ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির পরিবার ও সহপাঠীরা। বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) মামলার রায় ঘোষণার কথা রয়েছে। ওসি মোয়াজ্জেমকেও সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত করা হয়েছে।

ওসি মোয়াজ্জেমের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে নুসরাতের মা শিরিন আখতার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি আদালতে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিয়েছি, আমি বলেছি ওসি মামলাকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, হত্যাকাণ্ডকে আত্মহত্যা বলে প্রতিষ্ঠিত করারও চেষ্টা করেছেন। ওসি মোয়াজ্জেমের সাজা হলে নুসরাতের আত্মা শান্তি পাবে।'

শিরিন আথতার আরও বলেন, আমি আদালতে জবানবন্দিতে বলেছি, গত ২৭ মার্চ আমার মেয়ে নুসরাতসহ সোনাগাজী থানায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করতে যাই। তখন ওসি মোয়াজ্জেম আমার মেয়ের জবানবন্দি গ্রহণ করেন। ওসির রুমে আমাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। রুম থেকে বের হয়ে নুসরাত বলে, ‘আমার নেকাব খুলে ওসি জবানবন্দি ভিডিও করেছে।’

নুসরাতের ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান বলেন, গত ২৭ মার্চ আমাদের বাইরে রেখে নুসরাতকে ওসির রুমে নিয়ে যায়। রুম থেকে বের হয়ে নুসরাত জানায়, ওসি তাকে আপত্তিকর কথা বলেছে। পরে ১২ এপ্রিল ফেসবুকে ওই ভিডিওটি দেখতে পাই। আদালত তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিক, এটাই আমাদের চাওয়া।

নুসরাতের বান্ধবী নিশাত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা নুসরাতকে যৌন হয়রানির পর নুসরাত যেমন অপমান বোধ করেছিল ওসি মোয়াজ্জেমের ভিডিও ধারণের সময়ও নুসরাত তেমন অপমান বোধ করেছে। আমরা ওসির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

স্থানীয় অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজু বলেন, ‘ওসি মোয়াজ্জেমের অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিৎ। কারণ তিনি আইনের পরিপন্থী উপায়ে থানায় ডেকে নিয়ে নুসরাতের জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন। তিনি এটা করতে পারেন না, আবার ভিডিওটির প্রচারও করতে পারেন না।

ফেনী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শাহ জালাল রতন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শুরু থেকে ওসি মোয়াজ্জেমসহ ফেনীর পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার এ হত্যাকাণ্ডটিকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিল। আমরা বিভিন্ন তথ্য উপাত্তের মাধ্যমে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছি এটি আত্মহত্যা নয়, পরিকল্পিত হত্যা।

এদিকে নুসরাত হত্যা মামলার রায়ের পর ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেন, নুসরাত হত্যা মামলায় সংশ্লিষ্ট থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে অভিযুক্ত করা হলে মামলার রায়টি পূর্ণতা পেতো। মোয়াজ্জেমের সাজা যদি কনফার্ম করা হয়, ন্যায়বিচারের মাধ্যমে যদি নিশ্চিত করা যায়, তাহলে নুসরাত জাহান রাফির আত্মাপরিপূর্ণভাবে শান্তি পাবে।

নুসরাত হত্যাকাণ্ডের পর থেকে এ পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়ে নিহতের পরিবার ও স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। পরে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের তদন্ত প্রতিবেদনেও বিষয়টি উঠে আসে। নুসরাতকে কেরোসিন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় চলতি বছরের ২৪ অক্টোবর ১৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। এখন আইসিটি আইনের মামলাটিতে এ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালত কি রায় দেয় তার দিকে তাকিয়ে আছে সবাই। 

এ হত্যার ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তদন্ত শেষে পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত দল সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেমসহ চার পুলিশ কর্মকর্তার গাফিলতির প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছিল। পরে গত ১৫ এপ্রিল এ ঘটনায় ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। এ মামলার পর ওসি মোয়াজ্জেম ২০ দিন পালিয়ে থাকার পর গত ১৬ জুন হাইকোর্ট এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে শাহবাগ থানা পুলিশ।