ইদ্রিসের মতো ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গা নিজ দেশে ফিরতে চান। প্রায় তিন বছর হতে চললেও এখনও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। দিন যতই যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের হতাশা ততই বাড়ছে।
আজ শনিবার (২০ জুন) বিশ্ব শরণার্থী দিবস। প্রতিবছর দিবসটি আসে। কিন্তু, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরা অনিশ্চয়তার মধ্যেই রয়ে গেছে। তারা জানেন না নিজের দেশে কবে ফিরতে পারবেন।
রোহিঙ্গারা বলছেন, মিয়ানমার সরকারের দমন-নিপীড়নের শিকার হয়ে বাপ-দাদা ভিটেমাটি ছেড়ে শরণার্থী হয়েছি। বাংলাদেশে সবদিক দিয়ে সুখে থাকলেও মনটা পড়ে আছে রাখাইনে। আন্তর্জাতিক মহলের নানা তৎপরতা সত্ত্বেও প্রত্যাবাসন নিশ্চিত না হওয়ায় এ অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে রোহিঙ্গাদের মাঝে। এছাড়াও বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতি নিয়ে দাতা দেশগুলো ব্যস্ত থাকায় ঘোর অন্ধকারে রয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। চাপা পড়ে গেছে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম।
রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা মাস্টার আব্দুর রহিম বলেন, ‘জানি না আমাদের দেশ মিয়ানমারে কবে ফিরতে পারবো। এমনিতেই মিয়ানমারের নানা টালবাহানা, বিশ্ব সম্প্রদায়ের সদিচ্ছার অভাব। তারওপর করোনাভাইরাস ঘোর অন্ধকারের দিকে নিয়ে আসলো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। এ কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আদৌ হবে কিনা জানে না কেউ।’
একই কথা বলছেন উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি মাহমুদুল করিম, বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিনারা বেগম, লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সৈয়দ করিম, মধুরছড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দিল মোহাম্মদ, বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের লালু ও ফয়েজ উল্লাহ মাঝিসহ অনেকেই। তারা বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আমাদের প্রত্যাবাসনের জন্য। কিন্তু মিয়ানমারের ছল-চাতুরির ফাঁদে পুরো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
এদিকে, রোহিঙ্গাদের ভরণপোষণ, নিরাপত্তা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়া ঠেকানো নিয়ে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এর মধ্যে বিভিন্ন দেশের আর্থিক সহায়তাও কমে আসছে। ফলে রোহিঙ্গাদের নিয়ে সংকট আরও গভীরতর হচ্ছে। দিন যতই গড়াচ্ছে বিশ্বের বিশাল এই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাড়ছে অস্থিরতা। বাড়ছে খুন-খারাবি থেকে শুরু করে নানা অপরাধ। স্থানীয় লোকজনও ধৈর্য্য হারাচ্ছে।
এ বিষয়ে রোহিঙ্গা প্রতিরোধ ও প্রত্যাবাসন কমিটির সভাপতি ও উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘এমনিতে নানা কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরার বিষয়টি ঝুলে আছে। এর মধ্যে বিশ্বব্যাপী করোনার প্রভাব। এতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি চাপা পড়ে আছে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ- মিয়ানমারের জয়েন ওয়ার্কিং কমিটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে একাধিক বৈঠকের পরও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আলোর মুখ দেখেনি। রোহিঙ্গা ফেরাতে মিয়ানমারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো দরকার। এভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা না গেলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান কোনোদিনও হবে না।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিকভাবে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। প্রতিবেশী হিসেবে মিয়ানমারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে। তবে করোনার কারণে আন্তর্জাতিক শরণার্থী দিবস আনুষ্ঠানিকভাবে পালিত হচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর ও ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে অন্তত সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়। নতুন-পুরনো মিলিয়ে ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৫৭ জন রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে।