সাজেকে খাবার পানির সংকটে ৩০ হাজার মানুষ

Rangamati Sajek Water Crisis Pic (3)রাঙামাটির দুর্গম এলাকা সাজেকে বছর জুড়েই থাকে খাবার পানির সংকট। ঝিরি-ঝর্ণা থেকে নিজেদের খাবার পানি সংগ্রহ করলেও গ্রীষ্মকালে সেগুলো শুকিয়ে যায়। এতে খাবার পানির সংকট আরও তীব্র হয়। আবার বৃষ্টি শুরু হলে এসব উৎসের পানি ঘোলাটে ও পানের অযোগ্য হয়ে ওঠে। ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যমতে পুরো ইউনিয়নে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বিশুদ্ধ পানির সংকটে রয়েছেন। তবে জনস্বাস্থ্য বিভাগ সমস্যা সমাধানে নানা পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। 

৬১১৬.১৩ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের রাঙামাটি জেলায় ৭২৫ বর্গমাইল জুড়েই রয়েছে দেশের একমাত্র কৃত্রিম কাপ্তাই হ্রদ। এই হ্রদ এলাকাজুড়ে খাবার পানির সমস্যা না থাকলেও বাকি এলাকাতে খাবার পানির তীব্র সংকট রয়েছে। সেখানে সাজেকের পাহাড়ি অঞ্চলে সাধারণ মানুষের খাবার পানির একমাত্র ভরসা ঝিরি বা ঝর্ণার পানি। গ্রীষ্মকালে এসব উৎস শুকিয়ে গেলে পানির সমস্যা তীব্র হয়। আর বর্ষায় বৃষ্টি শুরু হলেও এসব উৎসের পানি ঘোলাটে ও পানের অযোগ্য হয়ে পড়ে। 

সাজেক মাচালং বাজারের স্থায়ী বাসিন্দা মঙ্গল চরণ চাকমা বলেন, শীতে ঝিরি-ঝর্ণার পানি মোটামুটি পাওয়া যায়। তবে বর্ষায় এসব উৎসের পানি ঘোলা হয়ে যার। ফলে বৃষ্টির পানিই হয়ে ওঠে আমাদের একমাত্র ভরসা। দীর্ঘদিন ধরে পানির সমস্যায় ভুগছেন পুরো সাজেক ইউনিয়নের মানুষ।

সাজেক মাচালং বাজারের সাধারণ সম্পাদক ফুলেস কার্বারি বলেন, গ্রীষ্ম আসতেই ঝিরি-ঝর্ণাগুলো শুকিয়ে যায় এবং বর্ষাকালে ঘোলা থাকে। এতে খাবার পানির সমস্যা তীব্র হয়। অনেক সময় স্থানীয়দের কয়েক মাইল হেঁটে পানি সংগ্রহ করতে হয়। তবু এই পানি পান করে অনেকে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। 

Rangamati Sajek Water Crisis Pic (6)রাঙামাটির বাঘাইছড়ি সাজেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা বলেন, পুরো সাজেক ইউনিয়নে খাবার পানির সমস্যা রয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় বরাদ্দের চেয়ের অনেকগুণ বেশি টাকা খরচ করে ডিপ টিউবওয়েল করা সম্ভব হলেও, বেশির ভাগ এলাকায় পাথর ও দুর্গমতার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। খাবার পানির সংকটে পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন দুর্গম এলাকার সাধারণ মানুষ। অনেকের চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুও হচ্ছে।  

রাঙামাটি আশিকা ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েটসের নির্বাহী পরিচালক বিপ্লব চাকমা বলেন, দুটি দাতা সংস্থার মাধ্যমে দুর্গম সাজেক এলাকায় ৭০০ পরিবারের মধ্যে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও পানি সংরক্ষণের জন্য পাত্র বা জার বিতরণ করা হয়েছে। প্রয়োজনে আবারও তাদের পাশে দাঁড়াবো।

তবে বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান হাবিব (জিতু) শুনিয়েছেন আশার বাণী। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সাজেকের পানির সমস্যা দেখতে এসেছিলেন এবং ওনারা এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছেন। ঝর্ণা ও বৃষ্টির পানি কীভাবে সংরক্ষণের মাধ্যমে খাওয়ার উপযোগী করা যায়, সে বিষয়ে কাজ চলছে। এটি বাস্তবায়িত হলে সাজেকে আর পানির সমস্যা থাকবে না।

Rangamati Sajek Water Crisis Pic (8)রাঙামাটির জনস্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী অনুপম দেও একই রকম তথ্য দেন। তিনি বলেন, বিশুদ্ধ পানির জন্য কাজের টেন্ডার দেওয়া হলেও দুর্গম এলাকায় নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের সমস্যার কারণে কেউ টেন্ডারে অংশ নেননি। আমরা অন্যভাবে খাবার পানির সমস্যা সমাধানে কাজ শুরু করেছি। কয়েকটি এলাকা পাইলট প্রকল্প হিসেবে বেছে নিয়েছি। যদি পাইলট প্রকল্প সফল হয়, তাহলে দুর্গম এলাকায় আর খাবার পানির সমস্যা থাকবে না।