মৃত্যুর আগে সন্তানের কবরের যথাযথ সংরক্ষণ চান মা

মেয়ের কবর দেখিয়ে দিচ্ছেন মাপাকিস্তানি সেনারা ঢুকে পড়েছে এলাকায়। চালাচ্ছে নির্যাতন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তরুণী মোছলেমা খাতুনকেও ধরতে ধাওয়া করে হানাদার বাহিনী। উপায়ন্তর না দেখে কোলের ১০ মাস বয়সী মেয়ে রুমাকে নিয়ে ঝাঁপ দেন কচুরিপানা ভর্তি ডোবায়। দুপুর ৩টা থেকে সন্ধ্যা নাগাদ এভাবেই থাকতে হয়। সেনার চলে যাওয়ার খবরে পাড়ে ডোবা থেকে ওঠার পর বুঝতে পারেন রুমা বেঁচে নেই। প্রায় ৯০ বছর বয়সি মোসলেমা খাতুন এখনও সেই কথা মনে করে কাঁদেন। চোখ বুজলেই ভেসে ওঠে ১০ মাস বয়সী সেই সন্তানের মুখ। মোছলেমা খাতুনের কথা, ‘পদক, পদবি বা অর্থ চাই না। মৃত্যুর আগে সন্তানের কবরের সংরক্ষণ দেখে যেতে চাই। আর এটা দেখে যেতে পারলে শান্তিতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে পারবো।’

মোছলেমা খাতুনের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার বিনাউটি ইউনিয়নের গাববাড়ি গ্রামে। বাড়ির পাশেই সন্তানের কবর। ১৯৭১ সালের ২৯ জুনের ওই ঘটনার পর সন্তানের কবরের সামনে যাওয়া একটা সময় রুটিনে পরিণত হয়েছিল তার। এখন বয়সের ভারে আর পেরে ওঠেন না। মেয়ের কবর সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে ছেলে কবির আহমেদ ভূঁইয়াকে দিয়ে ৯ সেপ্টেম্বর কসবা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে একটি লিখিত আবেদন পাঠিয়েছেন তিনি।

কসবা উপজেলা পরিষদের সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান ফারহানা সিদ্দিকী মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মোছলেমা খাতুনের বাড়িতে গিয়েছিলেন। তিনি রুমার কবর ও যেখানে মারা যান সেই স্থান ঘুরে দেখেন। এসময় তিনি জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কার ওই ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। হয়তো বিষয়টি চাপা পড়ে যায়। কবর সংরক্ষণের বিষয়ে উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবো।

মেয়ের কবর দেখিয়ে দিচ্ছেন মা

কবির আহমেদ বলেন, ‘আম্মা আমাদেরকে সেদিনের কথা শুনাতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। পাকিস্তানি বাহিনীর ভয়ে তিনি ডোবায় ছোট সন্তানকে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। চারিদিকে তখন গুলির শব্দ, ছোটাছুটি। গলা পর্যন্ত ডুবে ছিলেন আম্মা। তখনও কোলে আমার বোন। কিন্তু কী হতে যাচ্ছে সেদিকে আম্মার খেয়াল ছিল না। কয়েক ঘণ্টা পর ডোবা থেকে ওঠার পর দেখেন সন্তান মারা গেছে। শেষ বয়সে মায়ের একটাই আবদার যেন মেয়ের কবরটাকে সংস্কার করে সংরক্ষণ করা হয়। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কিছুদিনের মধ্যেই এসে কবরের জায়গাটি দেখে যাবেন বলে জানিয়েছেন।’ 

মুক্তিযোদ্ধা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘সেদিনের ঘটনাটি ছিল খুবই মর্মান্তিক। ধামসার এলাকার রমিজ উদ্দিনের বাড়ির পাশের একটি দিঘির পাড়ের কাছের ডোবায় সন্তানকে নিয়ে লুকিয়ে ছিলেন মোছলেমা খাতুন। মোছলেমা স্বামী জোহর আলী ভূঁইয়া, রমিজ উদ্দিন, উলফত আলী, ফরিদ উদ্দিনসহ আরও কয়েকজন মিলে শাড়ি কাপড় পেঁচিয়ে শিশুর লাশ দাফন করেন। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি চাই শিশুর কবরটি সংরক্ষণ করা হোক।’