গত ৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম রেঞ্জে যোগদান করেন ডিআইজি আনোয়ার হোসেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর সম্প্রতি বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
ডিআইজি বলেন, ‘মহানগর এলাকায় পুলিশের অনকে সুযোগ সুবিধা আছে। আলাদা একটি আইন অনুযায়ী মেট্রোপলিটন পুলিশ গঠিত। মেট্রোর কমিউনিকেশন ভালো। মেট্রোপলিটন এরিয়া ছোট। অল্প এলাকায় পুলিশের সদস্য সংখ্যা অনেক। যদি আমরা জেলা পর্যায়ের কথা চিন্তা করি, ধরেন নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর—ওই এলাকার একটি চর কোথায় অবস্থিত। সেখানে কিন্তু পুলিশ সদস্যরা আছেন। সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটাই দুর্বল। আবার রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান সেই এলাকায়ও আমাদের পুলিশ সদস্যরা কাজ করেন। তাদের জন্য কাজ করা কিন্তু বেশ কঠিন হয়ে যায়। তাই আমরা প্রযুক্তিনির্ভর পুলিশ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই।’
নতুন দায়িত্ব নেওয়ার পর এই পুলিশ কর্মকর্তার ভাবনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নতুন দায়িত্ব নিয়ে আমার যে ভাবনা সেটি হলো, আমি চাইবো, পুলিশ সদস্যরা সবার সঙ্গে ভালো আচরণ করুক, ভালো ব্যবহার করুক। পেশাদারিত্ব বজায় রেখে আইনের প্রয়োগ করুক। আমাদের অন্যতম দায়িত্ব হলো শৃঙ্খখলা রক্ষা করা। আমরা সততার সঙ্গে, পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করবো। নিজেদের মধ্যে, পুলিশের মধ্যে যে সম্পর্ক আছে; সেখানে পেশাদারিত্বকে প্রাধান্য দেবো। মানুষের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে পেশাদারিত্বকে প্রাধান্য দেবো। অন্য পেশাজীবী যারা আছেন, তাদের সঙ্গেও আমাদের একটা পেশাদারি সর্ম্পক থাকবে। সব ক্ষেত্রে আমরা যদি পেশাদারিত্বকে প্রাধান্য দিই, তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সবকিছু নির্দিষ্ট করা আছে। আমার কাজ আমি করবো, আপনার কাজ আপনি করবেন। এইভাবে আমি ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা করবো, চট্টগ্রাম রেঞ্জের পুলিশ সদস্যদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য। জনগণের সঙ্গে সর্ম্পকটাকে আরও সুদৃঢ় করার জন্য। আমরা, পুলিশ জনগণের জন্য কাজ করি, জনগণ যদি ভালো না বলে, তাহলে এই কাজ করে লাভ কী? আমি তাই মনে করি।’
পুলিশ বহু ক্ষেত্রে সুনাম কুড়ালেও সম্প্রতি পুলিশের দ্বারা সৃষ্ট ঘটনায় এ বাহিনীর সুনাম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে—এমন প্রশ্নে ডিআইজি বলেন, ‘দেখেন, পুলিশ একটা বিরাট বাহিনী। এখানে প্রায় ২ লাখ ১০ হাজারের মতো সদস্য আছেন। এর মধ্যে এক দুই জনের মধ্যে সমস্যা থাকতে পারে। তবে কোনও পুলিশেরই অনৈতিক হওয়া উচিত না। কারও অনৈতিক আচরণকে আমরা কখনও সাপোর্ট করবো না। পুলিশ সদস্যরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে উর্ত্তীণ হয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। প্রশিক্ষণ দিয়ে তাকে উপযুক্ত করে গড়ে তোলা হয়। সবাইকেই প্রত্যাশিত আচরণ করতে হবে। আচরণের একটি প্রত্যাশা, স্ট্যান্ডার্ড আছে। সবাইকে সেই লেভেল ধরে আচরণ করতে হবে। কেউ যদি তা করতে না পারে, আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। কিন্তু আমাদের মূল লক্ষ্য যেটি, সেটি থেকে কখনও বিচ্যুত হবো না। যারা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, হবে। ভবিষ্যতে যদি কেউ করেন, তাদের বিরুদ্ধেও হবে। একজন ডিআইজি হিসেবে আমি চেষ্টা করবো, আমার বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। যেন তারা আইন মেনে কাজ করেন এবং জনগণের সঙ্গে ভালো সর্ম্পক বজায় রাখেন।’
ওসি প্রদীপের ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ওই সময় এখানে কর্মরত ছিলাম না। তাই ওই ঘটনা নিয়ে আমি কিছু বলবো না। আমি সামনের দিনের কথা বলবো। যিনি করেছেন, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মামলা হয়েছে, তিনি গ্রেফতার হয়েছেন, তার বিচার হবে। এর বাইরে আমি যেটি করবো, সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আমি যোগদান করার পরের দিন টেকনাফ গিয়েছি। টেকনাফ থানায় গিয়ে সব সদস্যদের সামনে নিয়ে এসে তাদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, কাজ করার পদ্ধতি বলে দিয়ে এসেছি। আমাদের সামনে আইন আছে, আমরা আইন প্রয়োগ করি। কীভাবে করবো? সেটি আইনের মধ্যেই বলা আছে। এর বাইরে আমি যাবো না।’
ইয়াবা কারবারিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘একটি ঘটনা ঘটনার পর, কিছুটা সমস্যা তৈরি হবে। এটার জন্য একটু সময় লাগবে। এখানে কোথায় সমস্যা সেটি রিথিঙ্ক করতে হবে। এখন নতুন করে কীভাবে করা যায়। আমাকে একটু সময় দিতে হবে। ইয়াবা পাচার রোধ পুলিশ একা করতে পারবে না। এর জন্য সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। মাদক যদি দেশে আসে, ক্ষতি কী আমার একলার হবে? সবার ক্ষতি হবে। ছেলেমেয়েরা মাদকাসক্ত হবে। কেউ কী চায়, তার ছেলেমেয়ে মাদকাসক্ত হোক। তাই প্রত্যেকে যদি প্রত্যেকের জায়গা থেকে ইয়াবা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন, তাহলে পুলিশের পক্ষে কাজ করা সহজ হবে। পুলিশ দায়িত্বপ্রাপ্ত, অবশ্যই আমাদের বেশি কাজ করতে হবে। তবে সঙ্গে অবশ্যই আপনাদেরও থাকতে হবে।’
থানায় অর্থ লেনদেনকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হন। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি থানায় এ ধরনের অভিযোগ উঠেছে। এই হয়রানি বন্ধে পদক্ষেপের বিষয়ে ডিআইজি বলেন, ‘আমি প্রতিটি থানায় যাচ্ছি, পুলিশ লাইনে যাচ্ছি। প্রত্যেক পুলিশ সদস্যকে আমি সতর্ক করে দিচ্ছি। এরপরও যদি কেউ করে, আপনারা আমাকে তথ্য দেবেন। আমি কাজ করবো। আমার কাছে যখন তথ্যটা চলে আসবে, তখন ব্যবস্থা নেবো। আমি বার বার বলছি, তাদের মটিভেট করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমার প্রচেষ্টায় বেশিরভাগ হয়তো ঠিক হয়ে যাবেন। এর পরও যদি কেউ করে আমাকে জানাবেন। আমরা ওদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। ১০ বার বলবো, একশ’ বার বলবো না। যিনি পরিবর্তন হওয়ার তিনি ১০ বার বলাতে হবেন। যিনি ১০ বার বলাতে হবেন না, তিনি একশ’ বার বললেও পরিবর্তন হবেন না। যিনি পরিবর্তন হবেন না, তাকে আমার প্রয়োজন নেই।’
টেকনাফ ছাড়াও সম্প্রতি চট্টগ্রাম রেঞ্জের আরও কয়েকটি থানায় বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তখন আমি ছিলাম না। তখনকার বিষয়গুলো নিয়ে কিছু বলবো না। প্রত্যেকটা বিষয়ের নির্বাহী তদন্ত হবে। ওই তদন্তের মধ্য দিয়ে সেটি উঠে আসবে। আর এখন থেকে শুরু করে সামনের দিনে অর্থাৎ আমার সময়ে যেসব কাজ হবে, সেগুলো আমরা অবশ্যই আইন মেনে করবো। সামনে আইন, সব কাজ হবে আইন মেনে। আমার কাজ হবে আইনসঙ্গতভাবে।’