খোঁজ নিয়া জানা যায়, এবারও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার মেঘনার তীরবর্তী লালপুর এবং নাসিরনগরের হাওরপাড়ে বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি করা হয়েছে সারি-সারি মাচা। এসব মাচায় শোল, বোয়াল, পুটিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মিঠা পানির মাছ শুকিয়ে তৈরি করা হচ্ছে শুঁটকি। লবনবিহীন হওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলের শুঁটকি দেশ ছাড়াও ভারতসহ মধ্যপ্রাচ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে করোনার প্রভাবে গত মৌসুমে রফতানির পথ বন্ধ থাকায় অবিক্রিত রয়ে গেছে অন্তত ২০ কোটি টাকা মূল্যের বিপুল পরিমাণ শুকনো মাছ।
এর মধ্যে চলতি মৌসুম শুরু হয়েছে গত সেপ্টেম্বর থেকে। তবে বিগত বছরের ক্ষতির চিন্তা করে বসে নেই মাছ শুকানোর কাজে জড়িতরা। তারা বলছেন, ‘রফতানির পথ খোলা না হলেও এনজিওসহ দাদন ব্যবসায়ীদের থেকে চড়া সুদে আনা বিপুল পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে গিয়ে তাদের কাজে নামতে হয়েছে।
অপর ব্যবসায়ী সুকমল দাস জানায়, গত বছরের শুঁটকি অনেক আছে। তবু কিছু টাকা লোন নিয়ে এ বছর ব্যবসা করছি। আগে দেশ-বিদেশে এই শুঁটকি রফতানি হতো। তবে করোনার কারণে কোথাও তা পাঠানো যাচ্ছে না। যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে এ বছরেও ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়বেন।
তিনি বলেন, ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আর্থিক সহায়তার জন্য এনজিওসহ বিভিন্ন বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে যেতে হচ্ছে। ব্যাংকে যদি লোনের জন্য যাই তাহলে আমাদেরকে লোন দেওয়া হয় না। তারা (ব্যাংক কর্তৃপক্ষ) জমির কাগজপত্র চায়, কিন্তু আমাদের জমি নেই। এ কারণে বাধ্য হয়েই এনজিও থেকে লোন নিতে হয়। সহজ শর্তে তফসিলি ব্যাংকগুলো যদি ঋণ দিতো তাহলে আমরা বেঁচে যেতাম।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত উদ-দৌলা-খান জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক যে ঋণ দেয়, তাদের কিছু নীতিমালা আছে। ভূমি মালিকানা দেখে তারা ঋণ দেয়। এটি আমাদের দেশে প্রচলিত পদ্ধতি। শুঁটকি মাছ ব্যবসায়ীরা মৌসুমি। সেজন্য তাদের ঋণ পেতে সমস্যায় পড়তে হয়। তবে তারা যেন সহজ শর্তে ঋণ পান, সেই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পাশাপাশি রফতানি বাণিজ্যের বাধাগুলো দূর করার উদ্যোগের কথা জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, তিতাস ও মেঘনা পাড়ের বিভিন্ন শুঁটকি পল্লীতে প্রায় পাঁচ হাজারেরও বেশি শ্রমিকের শ্রম আর ঘামে মৌসুমের আশ্বিন থেকে চৈত্রমাস পর্যন্ত ছয় মাসে অন্তত শত কোটি টাকার শুটকি তৈরি হয়।