সাবেক এমপি বদিকে পিতা দাবি করে আদালতে যুবক

আবদুর রহমান বদি ও মোহাম্মদ ইসহাককক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদিকে নিজের পিতা দাবি করে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন মোহাম্মদ ইসহাক (২৬) নামের এক যুবক। দীর্ঘ সময় ধরে আলোচিত সাবেক এই সংসদ সদস্যকে নিজের পিতা জেনেও রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ভয়ে বাবা ডাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত কোনও উপায় না দেখে রবিবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে কক্সবাজারের টেকনাফ সহকারী জজ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন। এ নিয়ে গত দুই দিন ধরে টেকনাফসহ পুরো জেলায় চলছে আলোচনার ঝড়। 

টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালী পাড়া গ্রামের ২৬ বছরের যুবক মোহাম্মদ ইসহাক জন্মের পর থেকেই পিতৃত্ব থেকে বঞ্চিত। পিতার পরিচয় জেনেও এত বছর চুপ ছিলেন। দূর থেকে নীরবে চোখের পানি ফেলেছেন। কিন্তু প্রকাশ্যে বাবা ডাকার সুযোগ হয়নি।

কোনও উপায়ন্তর না দেখে এবার প্রকাশ্যে এলেন ওই যুবক। আদালতে মা সুফিয়া খাতুনকে বিবাদী করে সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদিকে পিতৃত্বের মর্যাদা দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। পিতৃ পরিচয় নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজনে ডিএনএ টেস্ট করারও আবেদন করেছেন তিনি। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন। 

আদালতে করা আবেদনবাদী মোহাম্মদ ইসহাক আবেদনে উল্লেখ করেছেন, ১৯৯২ সালের ৫ এপ্রিল কলেমা পড়ে তার মা সুফিয়া খাতুনকে বিয়ে করেন আবদুর রহমান বদি। বিয়ে পড়ান বদির পারিবারিক আবাসিক হোটেল নিরিবিলিতে তৎসময়ে কর্মরত মৌলভী আবদুস সালাম। বিয়ের স্বাক্ষী ছিলেন হোটেলের দারোয়ান এখলাছ মিয়া। বুদ্ধি হওয়ার পর মায়ের কাছে জানতে পারেন তার পিতা আবদুর রহমান বদি। পরবর্তীতে মায়ের হাত ধরে অসংখ্যবার পিতার কাছে যান। পিতা আবদুর রহমান বদি আড়ালে তাকে নিজের সন্তানের মত বুকে জড়িয়ে আদর করেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এভাবে অনেকবারই পিতার কাছে গিয়ে সান্নিধ্য পেয়েছেন। কিন্তু প্রকাশ্যে সন্তান হিসাবে মোহাম্মদ ইসহাককে মেনে নেয়নি বদি। রাজনৈতিক ক্যারিয়ার, সামাজিক অবস্থানসহ নানা সমীকরণ দেখিয়ে তার মায়ের কাছে বারবার সময় নেন। মা সুফিয়া খাতুনও স্বামীর কথার অবাধ্য হননি। তাই এতদিন চুপ ছিলেন।

মোহাম্মদ ইসহাক আরও জানান, তার বয়স বাড়ার কারণে পিতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। বিষয়টি নিয়ে মা-ছেলে মিলে আবদুর রহমান বদির ছোট বোন শামসুন নাহারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা ঘরোয়াভাবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। কিন্তু আবদুর রহমান বদি কৌশলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। এখন তাদের সঙ্গে যোগাযোগও বন্ধ করে দিয়েছেন। তাই কোনও উপায় না দেখে পিতৃত্বের দাবিতে আদালতের দ্বারস্ত হয়েছেন।

জানতে চাইলে বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ওসমান বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বাদী মোহাম্মদ ইসহাকের মা সুফিয়া খাতুনকে বিয়ে করেছেন সেটি মায়ের স্বীকারোক্তি। ওই সময়ে বিয়ে পড়ানো মৌলভী আবদুস সালাম ও সাক্ষী এখলাছ এখন বেঁচে নেই। মা সুফিয়া খাতুনের উপর নির্ভর করে বাদী পিতৃত্ব দাবি করে আদালতে আবেদন করেছেন। আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির বিরুদ্ধে সমন ইস্যু করেছেন। আগামী ১৪ জানুয়ারি আদালত দিন ধার্য করেছেন।