উন্নয়ন প্রকল্পের নামে পাহাড় কেটে সাবাড়!

টিলা কেটে পুকুর করা হয়েছেপরিবেশ আইন অমান্য করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আখাউড়ায় টিলা কেটে মাটি জোগান দেওয়া হচ্ছে আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেলপথ প্রকল্পে। স্থানীয় এক শ্রেণির অসাধু ঠিকাদার এ কাজ করছেন বলে জানা গেছে। দিনে-দুপুরে ট্রাকে করে এসব পাহাড় কেটে মাটি নিলেও পরিবেশ অধিদফতর এবং স্থানীয় প্রশাসন অনেকটাই নিরব। তবে এই প্রতিবেদকের মাধ্যমে খবর পেয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনসহ পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা।

স্থানীয় সূত্র জানান, আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণে মাটির জোগান হিসেবে আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ মিনারকুট গ্রামের উঁচু পাহাড়ি টিলা কেটে ফেলা হচ্ছে। আর এসবের পেছনে কাজ করছে এক শ্রেণির ভূমি খেকো ঠিকাদার। দীর্ঘদিন ধরে এমন ধবংস যজ্ঞ চলতে থাকলেও রহস্য জনক কারণে অনেকটাই নিরব পরিবেশ অধিদফতরসহ স্থানীয় প্রশাসন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আখাউড়া এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাধারণ মানুষ।

নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের একজন সিকিউরিটি গার্ড জানান, দক্ষিণ মিনারকুট গ্রামের যে জায়গার মাটি কাটা হচ্ছে সে জায়গা আখাউড়া উপজেলার রাজিব ভূইয়া কিনে নিয়েছেন। এখন আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন নির্মাণ কাজে পাহাড়ের মাটি কেটে কাজে লাগাচ্ছেন।

ঠিকাদার রাজিব ভুইয়া বলেন, ‘এই জায়গা আমার কেনা। নিজের জায়গায় আমি মাটি কেটে পুকুর তৈরি করেছি। এখানে আমার মত আরও অন্তত ৫০ জন আছেন যারা নিজের জায়গায় পুকুর তৈরি করেছে। মাটিগুলো ইন্ডিয়ার রেলওয়ে কোম্পানি নিয়ে যাচ্ছে আর আমরা পুকুর তৈরি করছি। এখানে কোনও পাহাড় কাটা হয়নি। ইন্ডিয়ার রেললাইন তৈরিতে মাটি প্রয়োজন। সেজন্য যে জায়গায় কোনও ফসল হয় না। সেখানে মাটি কেটে জলাশয় তৈরি করা হচ্ছে।’

টিলা কেটে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে

তিনি আরও বলেন, ‘আমি আমেরিকা প্রবাসী। ১৫/২০ দিন পর আমেরিকা চলে যাবো। আমার বাড়িতে রেলওয়ে ঠিকাদারি কোম্পানির কর্মকর্তারা ভাড়া থাকেন। আমি পাহাড় যে কাটছি না তারা আরও ভালো বলতে পারবেন।’

 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা খেলাঘর আসরের সাধারণ সম্পাদক নীহার রঞ্জন সরকার বলেন, বাংলাদেশে সরকারিভাবে পাহাড় কাটা নিষিদ্ধ করা আছে। কারণ এটি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ কাজের নামে ভূমি খেকোরা পাহাড় কেটে নিচ্ছে। আমরা এ ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাহাড় খেকোদের বিরুদ্ধে  দ্রুত আইনগত  ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে দাবি জানাচ্ছি।

আখাউড়া মনিয়ন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল ভূইয়া জানান, তার ইউনিয়নে পাহাড় কাটা হচ্ছে তিনি তা অবগত নন। তবে তিনি শুনেছেন কেউ কেউ টিলামাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও আইনমন্ত্রীকে জানাবেন বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূরে আলম বলেন, ‘পাহাড় কাটা বিষয়টি আমাদের নজরে আসেনি। আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। যদি কেউ সরকারিভাবে নিষিদ্ধ পাহাড় কেটে থাকে তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’ এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যে তিনি সহকারী কমিশনার ভূমিকে নির্দেশ দেন।

পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক নূরুল আমীন জানান, সরকার যখন কোনও প্রকল্প বাস্তবায়ন করে তখন আমাদের পরামর্শ নিয়েই কাজ করে। সেখানে ঠিকাদারকে আমাদের কিছু নির্দেশনা দেওয়া থাকে। যেমন পাহাড় ,জলাশয় যেগুলো পরিবেশ সুন্দর রাখেন। এসব প্রাকৃতিক সম্পদে হাত দেওয়া যাবে না। কিন্তু কিছু সময় ঠিকাদাররা সে নিদের্শনা মানতে চায় না। তারা তাদের আর্থিক লাভের জন্য ভূমি দস্যু, পাহাড় দস্যুদের কাছ থেকে মাটি কিনে নিয়ে যায়। ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ কাজে পাহাড় কাটার বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবো।