ফসলি জমির ক্ষতি করে বিক্রি হচ্ছে উপরের স্তরের মাটি!

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ফসলি জমির ক্ষতি করে উপর স্তরের মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। এতে জমির উর্বরা শক্তি নষ্ট হচ্ছে, অপর দিকে পরিবেশের মধ্যে পড়ছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। প্রতিদিন ১০-১২টি ট্রাক্টর দিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়ায় গ্রামের রাস্তা ধুলাতে সয়লাব হয়ে পড়ছে। মাটি কেটে নেওয়ার কারণে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি ধুলা-বালির কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন স্থানীয়রা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল উপজেলার রাজামাড়িয়াকান্দি এলাকায় গড়ে উঠেছে ৩-৪টি ইটভাটা। এসব ইটভাটার মালিকরা কৃষকদের কাছ থেকে ফসলি জমির মাটি কিনে নিচ্ছেন। এছাড়া ইটভাটায় ট্রাক্টর দিয়ে মাটি পরিবহনের জন্য সরকারি জলাশয় (লইস্কা বিল) ভরাট ও কৃষকের জমির ওপর দিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

রাজামারিয়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মো. হারুনুর রশিদ অভিযোগ করেন, ইটভাটায় ট্রাক্টর দিয়ে মাটি পরিবহনের জন্য তার জমির ওপর দিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা করেছেন প্রভাবশালীরা। হারুনুর রশিদ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, আমার জমির ওপর দিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা করেছে। আমি গরীব মানুষ। লোকবল নেই। প্রতিবাদ করলে হুমকি দেয়।

তিনি বলেন, ১০ থেকে ১২টি ট্রাক্টর সারাদিন চলাচলের কারণে এলাকা ধুলা-বালিতে সয়লাব হয়ে গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কৃষক অভিযোগ করেন, সারাদিন মাটিবাহী ট্রাক্টর চলাচলের কারণে জমিতে স্তুপাকারে পড়েছে ধুলা। ধান গাছের চারা নষ্ট হচ্ছে। এভাবে মাটি কাটার ফলে জমির উর্বরা শক্তিও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জমির মাটি কেটে নেওয়ায় কয়েকটি জমি নিচু হয়ে গেছে। এতে জমিতে দেওয়া সেচের পানি থাকছে না, ওইসব নিচু জমিতে গিয়ে জমা হচ্ছে। এতে অন্য কৃষকরাও বাধ্য হয়ে তাদের জমির মাটি ইটভাটায় বিক্রি করছেন।

স্থানীয় কৃষক মো. আজগর আলী বলেন, ফসলি জমির মাটি কাটা নিষেধ। সম্পূর্ণ আইন পরিপন্থী কাজ। এটা জেনেও তিনি তার সাড়ে ১২ কানি জমির ( ১কানিতে ৩০ শতক) মাটি ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। তার প্রতি কানি জমি থেকে ৫ ফুট করে মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে।

ডিজিটাল ব্রিক্স নামে একটি ইটভাটার মালিক তার ইটভাটা থেকে প্রায় কোয়ার্টার কিলোমিটার দূরে ১২ কানি ফসলি জমির মাটি কিনেছেন। সেখানে প্রতি জমি থেকে ৫ ফুট গভীর করে মাটি কাটা হচ্ছে।

স্থানীয় একটি ইটভাটার মালিক বাবুল মিয়া বলেন, কৃষকেরাই আমাদের কাছে তাদের জমির মাটি বিক্রি করছেন। উঁচু জমিতে ফসল ভালো হয় না, পানি থাকে না তাই তারা আমাদের কাছে তাদের জমির মাটি বিক্রি করছেন। মাটি কাটলে জমিতে ফসল ভালো হয় বলে দাবি করেন তিনি।

খালে বাঁধ দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারি খাল নয়, ব্যক্তি মালিকানাধীন খালে বাঁধ দিয়েছি।’

তবে ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়ার বিষয়টি বেআইনি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে মন্তব্য করেছেন সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আরিফুল হক মৃদুল। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ফসলি জমির মাটি কাটা সম্পূর্ণ আইন পরিপন্থী কাজ। তবে স্বেচ্ছায় কেউ মাটি বিক্রি করলে কিছুই করার থাকে না। ট্রাক্টরের ধুলায় ফসল নষ্ট হওয়ার অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে যাথাযথ কাগজপত্র না থাকায় দুটি ইটভাটাকে চার লাখ থেকে আট লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অবৈধ ইটভাটা বন্ধে আমাদের অভিযান চলছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক নুরুল আমিন বলেন, নিয়মিত অভিযান চলমান আছে। লোকবল সংকটের অভাবে পুরো জেলায় সঠিকভাবে তদারকি করা যাচ্ছে না। তবে সাধ্য আনুযায়ী এসব অপকর্ম বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, জেলার ৯টি উপজেলার অন্তত ২০০ এর বেশি ভাটায় একই কায়দায় ফসলের উপরি ভাগের মাটিকেটে ইট তৈরির কাজ চলছে।