৩ রোহিঙ্গা ডাকাত নিহতের খবরে ক্যাম্পে স্বস্তি, মিষ্টি বিতরণ 

কক্সবাজারের টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ত্রাস শীর্ষ ডাকাত মো. জকির আহমদসহ তিন জন র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুযুদ্ধে’ নিহত হওয়ায় স্বস্তিতে মিষ্টি বিতরণ করেছে রোহিঙ্গারা। বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে টেকনাফ নয়াপাড়া নিবন্ধিত মৌচনির সি-ব্লকে মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে ক্যাম্প কমিটির উদ্যোগে তারা ডাকাতদের নির্যাতন থেকে মুক্তি পেয়ে দোয়া ও মিষ্টি বিতরণের এই আয়োজন করে। এ সময় ডাকাত জকিরের হাতে নির্যাতনের শিকার হওয়া পরিবার এবং নারী-শিশুসহ সাধারণ লোকজন সেখানে অংশ নেয়।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় টেকনাফের নয়াপাড়া মৌচনি রোহিঙ্গা শিবিরের পশ্চিম পাহাড়ে দুই পক্ষের গোলাগুলির ঘটনায় শীর্ষ ডাকাত জকির আহমদসহ তার দুই সহযোগী নিহতের খবর নিশ্চিত করেন কক্সবাজার র‌্যাব-১৫ অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম আহমেদ। তিনি জানিয়েছেন, এ ঘটনায় র‌্যাবের এক সদস্য গুলিবিদ্ধ এবং একজন আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে গোলাবরুদ উদ্ধার করা হয়েছে।

WhatsApp Image 2021-02-24 at 7.01.00 PMখুশি হয়ে ক্যাম্পের মানুষ মিষ্টি বিতরন করেছে উল্লেখ করেন টেকনাফ নয়াপাড়া নিবন্ধিত মৌচনি ক্যাম্প কমিটির চেয়ারম্যান মাস্টার মো. ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ছয় বছর ধরে এই ক্যাম্পের হাজারও মানুষ অপরাধ জগতের ত্রাস জকিরের কাছে জিম্মি ছিল। এই ডাকাত নিহত হওয়ায় এখানকার মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। তাই সবাই মিলে আমরা একটি দোয়ার অনুষ্ঠান করেছি। এছাড়া এখানকার লোকজন খুশি হয়ে সবার মাঝে মিষ্টি বিতরণ করেছে।  ক্যাম্পে যাতে এ ধরনের আর যাতে কোনও অপরাধী সৃষ্টি না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।’

নয়াপড়া ক্যাম্পের বৃদ্ধ হাফেজ মো. জাকারিয়া জানান, ‘একজন শীর্ষ ডাকাতমুক্ত হওয়ায় ক্যাম্পে যাতে শান্তি ফিরে আসে সেজন্য এ দোয়া-মিষ্টি বিতরণ করা হচ্ছে। আমাদের দাবি, এখন যাতে অন্য কোনও ডাকাতদল সক্রিয় হতে না পারে। অনেক দিন পর এখানকার মানুষ স্বস্তিতে নিশ্বাস নিয়ে ঘুমাতে পারবে।’     

ক্যাম্পের বাসিন্দা নুর আহমদ বলেন, ‘জকির আমার বড় ভাইকে মেরে ফেলেছে। তার জন্য আজ দুই বছর ক্যাম্পের বাইরে থাকতে হয়েছে। আজ সেই অপরাধে সাজা পেয়েছে জকির ডাকাত।’

গত বছর ২৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ঘর থেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর স্বামী মো. সফিউল্লাহর এখনও লাশ পাননি বলে আক্ষেপ করেন রোহিঙ্গা নারী নাছিমা খাতুন। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী কখনও কারও ক্ষতি করেনি। জকির ডাকাত অস্ত্রের মুখে তাকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর থেকে কোনও খোঁজ পাইনি। একমাস পর খবর পাই তাকে মেরে পাহাড়ি এলাকায় পুঁতে রাখা হয়। এখন অন্তত তার লাশটি পেতে চাই।’

র‌্যাব-১৫, সিপিসি-১ টেকনাফ ক্যাম্পের ইনচার্জ সহকারী পুলিশ সুপার বিমান চন্দ্র কর্মকার বলেন, ‘রোহিঙ্গা শীর্ষ ডাকাত নিহতের ঘটনায় র‌্যাব বাদী হয়ে তিনটি মামলা দায়ের করেছে। এই মামলায় ৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। মাদক, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে র‌্যাব রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছে।’ কোনও ডাকাত গ্রুপকে সক্রিয় হতে দেওয়া হবে না বলে জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।