অপরিপক্ব ফলে সয়লাব বাজার

চলে যাচ্ছে বৈশাখ। সামনে মধুমাস জৈষ্ঠ্য। বৈশাখের শুরু থেকেই কুমিল্লার বাজারে আসতে শুরু করেছে মৌসুমি ফল। আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, (লাল ও সাদা) জামরুল, আতাফল ও তরমুজসহ বিভিন্ন জাতের ফল। মৌসুমি এসব ফল নিয়ে মানুষের মধ্যে বিষাক্ত রাসায়নিক ভীতি কাজ করছে। নির্দিষ্ট সময়ের আগে অর্থাৎ পরিপক্ব না হতেই বাজারে আসায় ক্রেতাদের মধ্যে এই ভীতি তৈরি হয়েছে।

বিশেষ করে বাজারের যেসব আম এসেছে তা এখনও খাওয়ার উপযোগী হয়নি। কুমিল্লার বাজারে আসতে শুরু করা সাতক্ষীরার আম হিমসাগর ও গোবিন্দভোগ রাসায়নিক পদার্থ কার্বাইড মিশিয়ে পাকানো হচ্ছে। আম পাকানোর এই রাসায়নিক পদার্থ মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বলে জানান, কুমিল্লা জেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান।

এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বৈশাখ মাস শেষ হতে এখনও বাকি আছে। আসছে জৈষ্ঠ্য মাস। জৈষ্ঠ্য মাসের ৫ তারিখ পর্যন্ত শুধু দেশি আম ছাড়া কোনও আম খাওয়াই নিরাপদ না। বৈশাখ মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাজারে আসতে শুরু করা সাতক্ষীরার আম হিমসাগর ও গোবিন্দভোগ; যা এখনও পাকেনি। আরও সপ্তাহ বা ১০ দিন পর এই আম বাজারে এলে তা  খাওয়ায় ঝুঁকি কমবে। এর আগ পর্যন্ত বাজারের রাসায়নিক পদার্থ কার্বাইড মেশানো আম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। শুধু দেশি গুটিআম খাওয়া যাবে।’

মিজানুর রহমান আরও জানান, ‘বাজারের অসৎ ব্যবসায়ীরা নির্দিষ্ট সময়ের আগে বাগানে গিয়ে অপরিপক্ব আম নিয়ে এসে রাসায়নিক পদার্থ কার্বাইড মিশিয়ে পাকায়। এরপর এই আম বাজারে চড়া দামে বিক্রি শুরু করে। এগুলো কেনা মানে টাকা দিয়ে বিষ কিনে খাওয়া।’

সোমবার কুমিল্লার কান্দিরপাড়, টমছম ব্রিজসহ ফল বাজারের দোকানে দেখা গেলো, সাতক্ষীরা ও মানিকগঞ্জ থেকে আসা দুই, তিন জাতের আম বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। আমের প্রতি ক্রেতাদেরও বেশ চাহিদা রয়েছে। দোকানে দোকানে সাজিয়ে রাখা আম দূর থেকে দেখলেই বোঝার বাকি থাকে না এসব আম অপরিপক্ব। রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে পাকানোর পর এই আম বিক্রি করা হচ্ছে। বিক্রি করা এসব আমের মধ্যে সাতক্ষীরার হিমসাগর বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৫০ টাকা কেজিতে। গোবিন্দভোগ ১১০-১৩০ টাকা এবং মানিকগঞ্জের গুটি আম বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে।

কুমিল্লার একটি ফলের বাজারএছাড়াও নগরীর ফল দোকানগুলোতে মৌসুমী অন্যান্য ফলের মধ্যে আসতে শুরু করেছে আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, (লাল ও সাদা) জামরুল, আতাফল ও তরমুজ। কুমিল্লার ফল বাজারে লিচুর চাহিদা বেড়েছে। সুস্বাদু এই ফল কিনছেন ক্রেতারা। প্রতি একশ’ লিচু কুমিল্লার বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩৫০ টাকা দরে। এছাড়া তরমুজ প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৫০০ টাকায়, আতাফল ২০০ টাকা কেজি দরে।

আবুল হাসেম নামে এক ক্রেতা জানান, বাজারে মৌসুমি ফল এলেই মানুষের মধ্যে ফরমালিনের আতঙ্ক ভর করে। অসাধু ও অসৎ ব্যবসায়ীরা ফলে ফরমালিন ও কেমিক্যাল মিশিয়ে অপরিপক্ব ফল পাকানোর পর বিক্রি করেন। যার কারণে ফরমালিন আতঙ্কে ফল কিনতে ভয় হয়।’

কুমিল্লা নগরীর ফল বিক্রিতা মো. বাবুল বলেন, ‘মৌসুমী ফল বাজারে এলে প্রথম দিকে দামটা একটু বেশি থাকে। তবে মানুষ বেশি দাম দিয়েই সেগুলো কেনে। এখন যে ফল বিক্রি করছি, সব আমে কেমিক্যাল মেশানো হয়। ক্রেতা ধরে রাখতে বাধ্য হয়ে এভাবে বিক্রি করতে হচ্ছে।’ 

কান্দিরপাড়ের আম বিক্রেতা মো. সম্রাট বলেন, ‘আমি কুমিল্লার নিমসার আড়ত থেকে আম সংগ্রহ করছি। অপরিপক্ব আমে আমরা কোনও কেমিক্যাল ব্যবহার করি না। পাকা আমই কিনে আনি আড়ত থেকে। ওইখানে কীভাবে আম পাকানো হয়, তা আড়ত ব্যবসায়ীরা বলতে পারবেন।’

সম্রাট আরও বলেন, ‘রবিবার সারাদিন সাতক্ষীরার হিমসাগর ও গোবিন্দভোগ আম ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। বাজারে এ সব আমের চাহিদা রয়েছে।’

কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন জানান, মৌসুমি ফল বাজারে আসছে। অপরিপক্ব আম কেমিক্যাল মিশিয়ে পাকানোর প্রমাণ পাওয়ায় গত কিছুদিন আগে নিমসার বাজারে একটন আম নষ্ট করা হয়েছে। বাজারে যাতে অপরিপক্ব ফল বিক্রি করতে না পারে, এর জন্য ফল বাজারকে মনিটরিংয়ের আওতায় আনবো।’