টাকার বিনিময়ে অন্যজনের পরিবর্তে সাজা খাটা সেই মিনু মুক্ত

গার্মেন্টসকর্মীকে হত্যা মামলায় কুলসুম আক্তার কুলসুমী নামে এক নারীর পরিবর্তে টাকার বিনিময়ে কারাভোগ করা মিনু অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন। বুধবার (১৬ জুন) দুপুরে চট্টগ্রাম অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঁঞার আদালত তাকে মুক্তির আদেশ দেন। এরপর বিকাল ৪টায় মিনু চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ছাড়া পান।

মিনুর আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মাওলা মুরাদ এ তথ্য জানিয়েছেন। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘নামের মিল না থাকার পরও কুলসুম আক্তার কুলসুমী নামে এক নারীর পরিবর্তে মিনু কারাভোগ করছেন, বিষয়টি আদালতের নজরে আনার পর হাইকোর্ট মিনুর বিষয়ে যাচাই-বাছাই করতে প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। তদন্ত শেষে প্রশাসনিক কর্মকর্তা প্রতিবেদন জমা দেন। তার ভিত্তিতে মুক্তির জন্য আদালতে মিনুর আইনজীবীকে বন্ড দিতে বলা হয়। বন্ড জমা দেওয়ার পর আজ (বুধবার) আদালত তার মুক্তির আদেশ দেন।’

মিনুর টাকার বিনিমিয়ে জেলে যাওয়ার বিষয়ে অ্যাডভোকেট মুরাদ বলেন, ‘টাকার বিনিময়ে মিনু কারাভোগ করেন এটা ঠিক আছে। তবে ওই টাকা মিনু পাননি। মর্জিনা নামে একজন টাকাগুলো নিয়ে মিনুকে মিথ্যা কথা বলে আদালতে নেয়। মর্জিনা সহজ-সরল প্রকৃতির মিনুকে ভালো খাওয়ার এবং পোশাক দেওয়ার লোভ দেয়। এর বিনিময়ে তাকে আদালতে কুলসুম নাম বললে হাত তোলার কথা বলে। ওই অনুযায়ী মিনু কারাগারে যান৷মর্জিনা আসামী কুলসুম ও সাজা ভোগ করা মিনুর পরিচিত ছিল।’

প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালের জুলাই মাসে নগরের কোতয়ালি থানার রহমতগঞ্জের একটি বাসায় মোবাইল ফোনে কথা বলা নিয়ে গার্মেন্টসকর্মী কহিনুর আক্তারকে গলাটিপে হত্যার ঘটনা ঘটে। এরপর মরদেহটি একটি গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়। কিন্তু কহিনুর আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি করেন অপরাধী কুলসুম আক্তার কুলসুমী। এ ঘটনায় কোতয়ালি থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়। পুলিশ দুই বছর তদন্ত শেষে কহিনুরকে হত্যা করা হয় বলে প্রতিবেদন দেয়। এতে আসামি করা হয় কুলসুম আক্তার কুলসুমীকে। ২০১৭ সালের নভেম্বরে আদালত কহিনুর আক্তারকে হত্যা মামলায় আসামি কুলসুম আক্তার কুলসুমীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন। তবে সাজার পরোয়ানামূলে কুলসুম আক্তার কুলসুমীর বদলি হিসেবে মিনু ২০১৮ সালের ১২ জুন কারাগারে যান। তবে কোনও কিছুর মিল না থাকায় একজনের স্থলে আরেকজন জেল খাটার বিষয়টি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. শফিকুল ইসলাম খান আদালতের নজরে আনেন।