মিয়ানমার থেকে চলে আসা বুনো হাতি দুটি কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের ঘোলার চরে অবস্থান করছে। তিন দিনেও বনে ফেরানো যায়নি হাতি দুটিকে। ছোটাছুটি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়া হাতি দুটি মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছে।
সোমবার (২৮ জুন) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত হাতি দুটিকে বনাঞ্চলে ফেরানোর চেষ্টা করেছেন বন বিভাগের লোকজন। এ ঘটনায় টেকনাফ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন দক্ষিণ বন বিভাগ টেকনাফের রেঞ্জ কর্মকর্তা সৈয়দ আশিক আহমেদ। এদিন বিকাল ৫টা পর্যন্ত হাতি দুটিকে বনাঞ্চলে ফেরত পাঠাতে ব্যর্থ হয় বন বিভাগ।
বন বিভাগ ও স্থানীয়রা জানায়, মিয়ানমারের সীমান্ত পেরিয়ে নাফ নদ সাঁতরে শনিবার (২৬ জুন) দুপুরে বাংলাদেশে আসে বুনো হাতি দুটি। ওই দিন সন্ধ্যায় টেকনাফের জালিয়া পাড়া প্যারাবন থেকে হাতি দুটিকে বনাঞ্চলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় বলে দাবি করেছিল দক্ষিণ বন বিভাগ টেকনাফ ও এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের সদস্যরা।
এই টিমে নেতৃত্ব দেন দক্ষিণ বন বিভাগ টেকনাফের রেঞ্জ কর্মকর্তা সৈয়দ আশিক আহমেদ। রবিবার আবারও বনাঞ্চল থেকে সীমান্তের নাফ নদে নেমে আসে হাতি দুটি। সোমবার বিকাল পর্যন্ত হাতি দুটি নাফ নদের শাহপরীর দ্বীপের ঘোলার চরে অবস্থান করে। লোকজনের ভিড়ের কারণে হাতি দুটি টেকনাফ থেকে শাহপরীর দ্বীপে ছোটাছুটি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। একই সঙ্গে খাবারের অভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে।
দক্ষিণ বন বিভাগ টেকনাফের রেঞ্জ কর্মকর্তা সৈয়দ আশিক আহমেদ বলেন, দীর্ঘ সময় ছোটাছুটি করতে করতে হাতি দুটি ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। হাতি দুটিকে খাবার দেওয়া হচ্ছে। তবে লোকজনের ভিড়ের কারণে হাতি দুটিকে বনাঞ্চলে ফেরানো কঠিন হয়ে পড়েছে। হাতি দুটি বর্তমানে নাফ নদের শাহপরীর দ্বীপের ঘোলার চরে অবস্থান করছে।
তিনি বলেন, হাতি দুটিকে বনাঞ্চলে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা। এ বিষয়ে টেকনাফ থানায় জিডি করা হয়েছে। হাতি দুটি মিয়ানমারের কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কারণ তারা দাবি করেনি এখনও। যদিও দুই দিন আগে হাতি দুটি মিয়ানমার থেকে এসেছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বন বিভাগের এই কর্মকর্তা।
জানতে চাইলে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘শাহপরীর দ্বীপ নাফ নদের তীরে হাতি দুটি অবস্থান করছে। এ বিষয়ে বন বিভাগের এক কর্মকর্তা থানায় জিডি করেছেন। মূলত হাতি দুটিকে বনাঞ্চলে ঢুকিয়ে দিতে আমরাও সহতায় করছি।
কক্সবাজারের পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির (ইয়েস) প্রধান নির্বাহী এম ইব্রাহিম খলিল মামুন বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে হাতি দুটির নিরাপদ আশ্রয় ও খাবারের ব্যবস্থা না করলে মৃত্যু হবে। যদি শুরু থেকে বন বিভাগ হাতি দুটিকে বনাঞ্চলে পাঠানোর ব্যবস্থা নিতো তাহলে এমন সমস্যার সৃষ্টি হতো না।
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরুল হোসাইন বলেন, গত তিন দিন হাতি দুটিকে দৌড়ের ওপর রাখা হয়েছে। এতে ক্লান্ত হয়ে চরে পড়ে আছে। এমনিতে রোহিঙ্গাদের কারণে দেশের বুনো হাতি বিপন্নের পথে। এই হাতি দুটিকে দ্রুত বনাঞ্চলে ফেরত পাঠানোর পদক্ষেপ না নিলে যেকোনো সময় মারা যাবে।