বিয়ের রাতে শ্যালককে ফোন দিয়ে মুক্তিপণ চাইলেন বর

কুমিল্লায় বিয়ের রাতে এক লাখ টাকা মুক্তিপণের জন্য নববধূর ভাইকে ফোন করে বর। না হলে সদ্য বিয়ে করা স্ত্রীকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পুলিশকে জানালে বোনকে ফিরে পাবে না বলেও জানায়। এ অবস্থায় জাতীয় জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে দাউদকান্দি থানা পুলিশের সহযোগিতায় ওই নববধূকে উদ্ধার করা হয়।

বুধবার (৩০ জুন) সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান নববধূ খাদিজা আক্তার। ঘটনাটি ঘটে দাউদকান্দি এলাকায়। এ নিয়ে ৮ জুন কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল-৩ আদালতে মামলা করেছেন তিনি। মামলায় তার স্বামী ওমর ফারুকসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।

খাদিজা আক্তার বলেন, গত ৫ জুন উপজেলার মালিগাঁও গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে ওমর ফারুকের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। বিকালে শ্বশুরবাড়িতে নেওয়া হয়। তারা আমাকে মেনে নেয়নি। উল্টো মারধর করে। তখন স্বামী ফারুক জানায় উপজেলার গৌরিপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকবে। সন্ধ্যায় স্বামীর হাত ধরে বেরিয়ে যাই। গৌরিপুরে আমাদের বাসররাত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু উপজেলার মোহাম্মদপুর নামের একটি এলাকায় নিয়ে কিছু লোকের হাতে আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তারা মারধর করে গহনা খুলে নেয়। 

ওই সময় আমার খালাতো ভাই মেহেদী হাসানকে ওমর ফারুক ফোন করে বলে, এক লাখ টাকা নিয়ে আয়। পুলিশকে জানাবি না। তাহলে তোর বোনকে মেরে ফেলবো। পরে পুলিশের ফোন পেয়ে তারা আমাকে ফেলে যায়। আমি খালার বাড়িতে মাসহ লুকিয়ে আছি। নিরাপত্তাহীনতায় আছি। যেকোনও সময় আমাকে মেরে ফেলবে। আমি প্রতারকদের বিচার চাই।

খাদিজার খালাতো ভাই মেহেদী হাসান বলেন, খাদিজার বাবা নেই। আমরা তাদের পরিবারকে দেখভাল করি। ওই দিন আনন্দের সঙ্গে বোনকে বিয়ে দিয়েছি। কিন্তু সন্ধ্যায় বোনের স্বামী ফারুক ফোন করে জানায় এক লাখ টাকা নিয়ে আসতে, না হলে বোনকে মেরে ফেলবে। শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। নিরুপায় হয়ে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলাম। দাউদকান্দি থানা পুলিশ ফারুককে ফোন করলে বোনকে ফেলে রেখে চলে যায়। বোন ওই এলাকা ভালো করে চেনে না। তার সঙ্গে মোবাইলও নেই। রাতে পুলিশ লোকেশন ট্র্যাকিং করে বোনকে উদ্ধার করে। সেসব ফোন রেকর্ড আমার সংরক্ষণে রয়েছে। 

মামলার আইনজীবী জামিল আহমেদ রাতুল বলেন, মামলার বর্ণনার প্রকৃতি দেখে ধারণা করা যাচ্ছে, আসামিরা নারী পাচারকারী। বিয়ের রাতেই ওই নারীর সঙ্গে জঘন্য কাজ করেছে। আদালত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দাউদকান্দি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. হারিসুল হক বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দ্রুত আদালতে জমা দেবো।

এদিকে বারবার ফোন দিয়েও অভিযুক্ত ওমর ফারুকের ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। তার পরিবারের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও কেউ ধরেনি।