আড়াই মাস ধরে ওটিতে পড়ে আছে আইসিইউ শয্যা

চাঁদপুরে প্রতিদিন বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। জেলায় এ পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ১২৭ জন। আইসিইউ সুবিধা না থাকায় ঢাকা নেওয়ার পথে এ পর্যন্ত বেশ কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনায় মৃত্যু কমাতে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের জন্য চলতি বছরের এপ্রিল মাসে তিনটি আইসিইউ বরাদ্দ দেয় স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু আড়াই মাসের বেশি সময় ধরে আইসিইউ শয্যাগুলো পড়ে আছে হাসপাতালের অপারেশ থিয়েটারে (ওটি)। এতে সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।

গত মে মাসে আইসিইউ শয্যাগুলো চালু হওয়ার কথা থাকলেও কবে নাগাদ চালু হবে বলতে পারছে না কেউ। পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবল না থাকা, অক্সিজেন প্ল্যান্ট নির্মাণকাজ শেষ না হওয়াসহ কয়েকটি সমস্যার কারণে তা চালু করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, জেলায় ৭ জুলাই পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৯০১ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১২৯ জন। সুস্থ হয়েছেন পাঁচ হাজার ১১ জন। চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৭৬১ জন। বর্তমানে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২০ জন। হোম আইসোলেশনে রয়েছেন ৭৪১ জন।

হাসপাতালে ভর্তি রোগীর স্বজনরা জানান, আইসিইউ সেবা না থাকায় রোগীদের মৃত্যু হচ্ছে। রোগীর অবস্থা খারাপ হলে আইসিইউ ছাড়া উপায় থাকে না। এর মধ্যে কারও অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে পাঠানো হয় কুমিল্লা অথবা ঢাকায়। পথিমধ্যে রোগী মারা যায়।

চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, হাসপাতালের জন্য বরাদ্দ তিনটি আইসিইউ শয্যা আসে ১৩ এপ্রিল। হাসপাতাল কমপ্লেক্সে জায়গা কম থাকায় অপারেশন থিয়েটারের পাশেই তৈরি করা হচ্ছে আইসিইউ ইউনিট। শয্যা বসানোর জন্য ওই ইউনিটের যাবতীয় কাজ শেষপর্যায়ে।

চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. সুজাউদ্দৌলা রুবেল বলেন, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা ব্যবস্থা থাকায় করোনা রোগীদের অবস্থা বেশি খারাপ হচ্ছে না। হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন স্থাপনের কাজ ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে। আগামী সপ্তাহে উদ্বোধন করা হবে। আইসিইউ সেবা দিতে হলে প্রথমে লাগবে অক্সিজেন প্ল্যান্ট। আইসিইউ পরিচালনার জন্য আমাদের দক্ষ জনবল নেই। জনবল যখন দেবে তখন আইসিইউ চালু করতে পারবো।

চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হাবিব উল করিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের দক্ষ চিকিৎসক নেই। জনবল ছাড়া আইসিইউ চালু করা অসম্ভব। আইসিইউ শয্যা আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা স্বাস্থ্য বিভাগের ডিজিকে চিঠি দিয়েছি। কবে নাগাদ জনবল দেবে, তারাই কিছুই বলছে না। আমরা কীভাবে আইসিইউ চালু করবো?।

তিনি আরও বলেন, আইসিইউ শয্যা আসার কিছু দিনের মধ্যে আমরা আইসিইউ রুম প্রস্তুতের কাজ শুরু করি। কাজ শেষপর্যায়ে। আপাতত আইসিইউ শয্যাগুলো অপারেশন থিয়েটারে রাখা হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই অক্সিজেন প্ল্যান্ট চালু হবে। এরপর জনবল নিয়োগ বাকি থাকবে। জনবল নিয়োগ হলে কিছু জিনিসপত্র লাগবে তা আমরা সংগ্রহ করে নেবো।

চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াত উল্যাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আইসিইউ শয্যার আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র এখনও আসেনি। সেগুলো আনতে হবে। দক্ষ জনবল এখন পাওয়া যাবে না। তবে আইসিইউ পরিচালনার জন্য এখানের লোকজনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, আইসিইউ শয্যা না থাকায় স্বাভাবিকভাগেই গুরুতর রোগীদের সমস্যা হবে। তবে বর্তমানে কোনও রোগীর অবস্থা খারাপ হলে কুমিল্লা অথবা ঢাকায় পাঠানো হয়।