নিষেধাজ্ঞার পরেও এসেছে মিয়ানমারের গরু!

দেশের খামারিদের লোকসান থেকে বাঁচাতে প্রতিবেশী দেশ থেকে কোরবানির পশু না আনার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে সিদ্ধান্ত না মেনে একশ্রেণির ব্যবসায়ীরা এবারও মিয়ানমার থেকে কোরবানির পশু এনেছে। এর ওপর করোনা পরিস্থিতিতে অন্য সময়ের মতো পশুর হাট না জমায় কাঙ্ক্ষিত মুনাফার দেখা পাননি কক্সবাজার জেলার প্রান্তিক খামারিরা। 

জানা যায়, ঈদকে টার্গেট করে কক্সবাজারের খামারিরা দীর্ঘদিন ধরে মোটাতাজাকরণ পদ্ধতিতে প্রস্তুত করেন কোরবানির পশু। এবারের কোরবানির ঈদে কক্সবাজার জেলায় পশুর চাহিদা ছিল এক লাখ ৬৫ হাজার। কিন্তু জেলার সাড়ে সাত হাজার প্রান্তিক খামারে এক লাখ ৭৩ হাজার ৫১৯টি কোরবানির পশু প্রস্তুত করা হয়। চাহিদার তুলনায় আট হাজার ৫১৫টি পশু বেশি ছিল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 

কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে দেওয়া লকডাউন ও পাশের দেশ মিয়ানমার থেকে পশু আসায় কাঙ্ক্ষিত মুনাফা তুলতে পারেননি খামারিরা। 

মিয়ানমার থেকে আসা মহিষউখিয়ার সোনাইছড়ি গ্রামের খামারি শাহা আলম বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর গোখাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বেশি ছিল। লকডাউনের বিধি-নিষেধের সুযোগে কুড়া, ভুসি, খৈলসহ সবকিছুর দাম বেড়ে যায়। এসবের পরেও কোরবানি উপলক্ষে গরু মোটাতাজা করেছি। 

কক্সবাজার সদর উপজেলার খরুলিয়া এলাকার গরু খামারি মিন্ঠু সরকার বলেন, ‘খামারে ২৪টি কোরবানির জন্য উপযুক্ত ষাঁড় গরু রয়েছে। যার একেকটির দাম আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। কিন্তু, এই সময়ে মিয়ানমার থেকে গরু আসায় আমাদের ক্ষতি হয়েছে।’

কক্সবাজারের বিভিন্ন খামারে প্রস্তুত করা কোরবানির পশুকক্সবাজার সদর উপজেলা ডেইরি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফাহাদ জানান, কক্সবাজার জেলার প্রান্তিক খামারিরা সারা বছর বসে থাকে কোরবানির ঈদে গরু বিক্রির জন্য। এজন্য তারা কঠোর পরিশ্রম করে গরু মোটাতাজা করেন। কিন্তু, লকডাউন ও মিয়ানমার থেকে গরু আসায় তাদের ক্ষতি হয়েছে। 

কক্সবাজার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. অসিম বরণ সেন বলেন, কক্সবাজার জেলার খামারিরা এবারের কোরবানির ঈদে চাহিদার তুলনায় বেশি কোরবানির পশু প্রস্তুত রেখেছিলেন। এ অবস্থায় মিয়ানমার থেকে গরু এনে তাদের ক্ষতি করা হয়েছে। 

কক্সবাজারের বিভিন্ন খামারে প্রস্তুত করা কোরবানির পশুতিনি আরও বলেন, দেশীয় খামারিরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য আন্তঃমন্ত্রণালয়ে একটি কমিটি হয়েচিল। উক্ত কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয় এবার মিয়ানমার থেকে কোনও পশু আমদানি না করার। এরপরও কিছু মুনাফাখোর কিছু ব্যক্তি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মিয়ানমার থেকে গরু এনেছে। 

প্রসঙ্গত, কক্সবাজার জেলাসহ দেশের খামারিদের লোকসানের কথা বিবেচনা করে গত ৫ জুলাই মিয়ানমার থেকে গবাদিপশু আমদানি বন্ধ করে দেয় সরকার। এরপর থেকে একদিন মিয়ানমারের গবাদি পশু আমদানি বন্ধ থাকলেও পুনরায় মিয়ানমার থেকে কোরবানির পশু আসে। অবশ্য, গত ৯ জুলাই শুক্রবার টেকনাফ শাহপরীরদ্বীপের করিডোর দিয়ে মিয়ানমার থেকে আসা কিছু গরু, মহিষ ভর্তি ট্রলার ফিরিয়ে দিয়েছিল দায়িত্বরত বিজিবির সদস্যরা।