ভিডিও তৈরি করে বদলে গেছে ফাহিমের জীবন

ফাহিম শাহরিয়ারের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত থাকতেন বাবা-মা। বাম হাতে আঙুল না থাকায় একমাত্র সন্তান অন্য ছেলের মতো কাজ করতে পারবে না—এটাই ছিল তাদের দুশ্চিন্তার কারণ। তবে সেই দুশ্চিন্তা দূর হয়েছে। ফাহিম এখন স্বনির্ভর ও আত্মবিশ্বাসী। ভিডিও তৈরি করে ইউটিউব থেকে মাসে আয় করছেন প্রায় ৬০ হাজার টাকা।

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএস করছেন ফাহিম। বাড়ি চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায়। তার বড় বোন ২০০৭ সালে ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ফাহিমের ‘নব রস’ ও ‘ফাহিম শাহরিয়ার’ নামে দুটি ইউটিউব চ্যানেল আছে। দুটি চ্যানেলে ইতোমধ্যে তিন লাখ ১১ হাজার সাবস্ক্রাইবার। 

ফাহিম শাহরিয়ার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি মিরসরাইয়ের ছেলে। সমুদ্র, পাহাড় ও ঝরনা দেখে বড় হয়েছি। ছোটবেলা থেকেই আমার ভ্রমণের প্রবল শখ। বড় হওয়ার পর বন্ধুদের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যেতাম। এ সময় মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করতাম। ফেসবুকে ভিডিও ক্লিপ আপলোড করে খেয়াল করলাম, মানুষ আমার ভিডিও অনেক পছন্দ করছেন। তারপর ভাবলাম, ইউটিউবেও ভিডিও পোস্ট করি না কেন?’

‘নব রস’ ও ‘ফাহিম শাহরিয়ার’ নামে দুইটি ইউটিউব চ্যানেল আছে ফাহিমের

এ ভাবনা থেকে ২০১৬ সালের এপ্রিলে একটি ইউটিউব চ্যানেল খোলেন ফাহিম। এরপর সেখানে ভিডিও আপলোড শুরু করেন। অল্প সময়ে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ভিডিওগুলো।

তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে পরিবারের অনুরোধে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে ভিডিও এডিটর হিসেবে যোগ দিই। সেখানে কাজ করার সময় কিছু টাকা জমিয়ে একটা ছোট অ্যাকশন ক্যামেরা কিনি। ছোট ক্যামেরা কেনার একমাত্র কারণ ছিল, যেহেতু আমার বাম হাতে আঙুল নেই, বড় ক্যামেরা ধরতে পারবো না, তাই এই ক্যামেরা চাইলে গ্লোবসের মতো করে হাতের কব্জিতে বাঁধতে পারবো। সেই ক্যামেরায় শট করা ভিডিও ইউটিউবে আপলোড করতে থাকি, যা আমার বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীরা পছন্দ করতে থাকেন। এখন দুটি ইউটিউব চ্যানেলে তিন লাখ ১১ হাজারের বেশি সাবস্ক্রাইবার।’

ফাহিমের ইউটিউব চ্যানেল ঘুরে দেখা যায়, ‘দেশি বিয়ার গ্রিল’ সিরিজের ভিডিওগুলো সবচেয়ে জনপ্রিয়। এই সিরিজের ভিডিও তৈরির জন্য তিনি সুন্দরবনে, সাজেকের প্রত্যন্ত আদিবাসী গ্রাম, উঁচু পাহাড় বান্দরবানের তাজিংডং, পানির নিচে সেন্টমার্টিন ও সুনামগঞ্জের রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টসহ দেশের ৫০ শতাংশ অঞ্চল পরিদর্শন করেছেন।

বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে ভিডিও তৈরি করেন ফাহিম

আত্মবিশ্বাসী ফাহিম বলেন, ‘শারীরিক প্রতিবন্ধকতা আমাকে থামাতে পারেনি। একটি হাত দিয়ে রশি ধরে ১৫০ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে নেমে এসেছি। পানির নিচে স্কুবা ডাইভিং, মোটরবাইক ও গাড়ি চালানো এবং ড্রোন চালানোর মতো কঠিন কাজও করেছি। পদ্মা সেতুর ৪১তম স্প্যান স্থাপনের সময় একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের জন্য ড্রোন দিয়ে লাইভ করি। এর পাশাপাশি আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ক্যামেরা পারসন হিসেবেও কাজ করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘একসময় আমি ইউটিউবকে শখ হিসেবে নিয়েছিলাম। এখন এটা আমার আয়ের প্রধান উৎস। ইউটিউব থেকে আমার মাসিক আয় প্রায় ৬০ হাজার টাকা। এর বাইরে বিভিন্ন ডকুমেন্টারি ও ড্রোন ভাড়া করে আরও ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা উপার্জন করি।’