বাবুনগরীর জানাজা সম্পন্ন, দাফন নিয়ে মতবিরোধ

হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরীর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) রাত ১১টা ২০ মিনিটে হাটহাজারী দারুল উলুম আল মাদ্রাসা মাঠে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার নামাজে ইমামতি করেন হেফাজতে ইসলামের উপদেষ্টা জুনায়েদ বাবুনগরীর মামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী।

এদিকে জানাজার পর মাদ্রাসার কবরস্থানে জুনায়েদ বাবুনগরীকে দাফন করার কথা থাকলেও হেফাজতে ইসলামের একটি সূত্র জানিয়েছে, তাকে তার পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হবে। তাকে সমাহিত করার জন্য হাটহাজারী মাদ্রাসা এবং নিজ বাড়ি ফটিকছড়ির বাবুনগরে দুটি পৃথক কবর খোড়া হয়েছে। মাদ্রাসার ছাত্ররা তাকে মাদ্রাসার কবরস্থানে সমাহিত করার পক্ষে। তবে হেফাজতে ইসলামের একটি সূত্র জানিয়েছে, জানাজার নামাজের পর পারিবারিক কবরস্থানেই তাকে সমাহিত করা হবে।

জানাজায় ইমামতি করেন হেফাজতে ইসলামের উপদেষ্টা জুনায়েদ বাবুনগরীর মামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে হেফাজত নেতা সালাহউদ্দিন নানুপুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জুনায়েদ বাবুনগরী সাহেবকে তার পারিবারিক কবরস্থানেই দাফন করা হবে। জানাজার নামাজের পর তাকে নিজ বাড়ির কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে তাকে সমাহিত করা হবে।’

এর আগে দুপুর পৌনে ১টার দিকে চট্টগ্রামের সিএসসিআর হাসপাতালে মারা যান মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী। তিনি কিডনি সমস্যা ও ডায়াবেটিসসহ নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন।

স্থানীয় সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ১৯৫৩ সালের ৮ অক্টোবর ফটিকছড়ি থানার বাবুনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন জুনায়েদ বাবুনগরী। তার বাবার নাম আবুল হাসান ও মা ফাতেমা খাতুন। পাঁচ বছর বয়সে তিনি আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগরে ভর্তি হন। এখানে তিনি মক্তব, হিফজ ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। এরপর ভর্তি হন দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসায়। ১৯৭৬ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। তারপর উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি পাকিস্তান যান। ১৯৭৬ সালে করাচিতে জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়ায় তাখাচ্ছুছাত ফিল উলুমুল হাদিস তথা উচ্চতর হাদিস গবেষণা বিভাগে ভর্তি হন।

জুনায়েদ বাবুনগরী১৯৭৮ সালের শেষের দিকে দেশে প্রত্যাবর্তন করে বাবুনগর মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার কর্মজীবনের সূচনা হয়। বাংলাদেশের মাদ্রাসাগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম বাবুনগর মাদ্রাসায় তিনি উচ্চতর হাদিস গবেষণা বিভাগ চালু করেন। ২০০৩ সালে তিনি দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসায় যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক নিযুক্ত হন।

২০২০ সালের ১৭ জুন মাদ্রাসা কমিটি সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়। তার স্থলে মাদ্রাসার জ্যেষ্ঠ শিক্ষক শেখ আহমদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। একই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর হাটহাজারী মাদ্রাসায় ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে ১৭ সেপ্টেম্বর মাদ্রাসার মহাপরিচালক শাহ আহমদ শফী পদত্যাগ করে মজলিসে শুরাকে দায়িত্ব দেন। ১৮ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন শাহ আহমদ শফী। তার মৃত্যুর পর ১৫ নভেম্বর সংগঠনের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মাধ্যমে সর্বসম্মতিক্রমে আমির হন জুনাইদ বাবুনগরী।