ভোগান্তি কমলো ঢাকা-চট্টগ্রামসহ ৪ রেলপথের যাত্রীদের

কুমিল্লার ২৪ কিলোমিটার নতুন ডাবল রেল লাইন ঢাকা-চট্টগ্রামসহ চারটি রেলপথে ট্রেন চলাচলে যাত্রীদের ভোগান্তি কমিয়ে দিলো। জেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের লাকসাম-টু-কুমিল্লা সিঙ্গেল রেল লাইনটিকে ব্রড ও ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনে উন্নীত করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। ঢাকা-চট্টগ্রাম ৩২১ কিলোমিটার রেলপথের ৭২ কিলোমিটার ব্রড ও ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন প্রকল্পের ২৪ কিলোমিটার লাইনে এখন ৪৪টি ট্রেন কম সময়ে চলাচল করছে। এতে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় যেমন কমেছে, তেমনি যাত্রীদের যাত্রাপথে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার অবসান ঘটেছে।

শনিবার রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন কুমিল্লা রেল স্টেশনে এক অনুষ্ঠান ২৪ কিলোমিটার নতুন লাইনের উদ্বোধন করেন। পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের ব্রড ও ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন হিসেবে সর্বপ্রথম লাকসাম-কুমিল্লা এই ২৪ কিলোমিটার ডাবল রেল লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু করলো। এতে ট্রেন দুর্ঘটনা, শিডিউল বিপর্যয় কমে আসবে। পাশাপাশি ডুয়েলগেজে ট্রেন চলাচল করলে দ্বিগুণ পরিমাণে মালামাল ও যাত্রী পরিবহন করলে রেলে রাজস্ব আয় বাড়বে।

রেলের একটি সূত্র জানায়, আগামী ৭ থেকে ১০ বছর পর পূর্বাঞ্চল রেলে ব্রডগেজ ট্রেন পরিচালনা করা সম্ভব হবে। তবে আগামী বছর আখাউড়া-কুমিল্লা পর্যন্ত বাকি ৪৮ কিলোমিটার ব্রড ও ডুয়েল গেজ লাইন স্থাপন সমাপ্ত হলে এ পথের পুরোটাই ডাবল লাইন হবে। ফলে এ পথে অতিরিক্ত আরও অন্তত ১২টি আন্তঃনগর ট্রেন পরিচালনা সম্ভব হবে। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে প্রায় এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় কমে আসবে। এ ছাড়াও রেলপথে বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-সিলেট, ঢাকা-নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহে যাতায়াতে ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট সময় কমে এসেছে।

কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার জগতপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. মাসুম করিম বান্দরবান মহিলা সরকারি কলেজের প্রভাষক। সোমবার সকালে চট্টগ্রাম অভিমুখী মহানগর প্রভাতী ট্রেনে তিনি কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘কুমিল্লা থেকে লাকসাম এখন ডাবল লাইন হওয়ায় ট্রেনের ক্রসিং কমেছে। পাশাপাশি সিডিউল বিপর্যয় না থাকায় কম সময়েই ট্রেনে যাতায়াত করছি। এতে ট্রেন ভ্রমণ আরও আরামদায়ক হয়ে উঠছে। এর আগে লাকসাম থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ডাবল লাইন থাকলেও লাকসাম-আখাউড়া অংশে তা না থাকায় আমরা ভোগান্তি পোহাতাম। এখন কুমিল্লা-আখাউড়া ডাবল লাইন হয়ে গেলে ভোগান্তি আরও কমবে।’

গত ১৬ বছর কুমিল্লা-চট্টগ্রাম রেলপথে যাতায়াতকারী একটি ওষুধ কোম্পানির কর্মকর্তা শেখ আবদুর রশিদ বলেন, ‘এই ২৪ কিলোমিটার সিঙ্গেল থেকে ডাবল লাইন হওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ে এখন গন্তব্যে পৌঁছতে পারছি।’

রেলওয়ের সহকারী লোকো মাস্টার খলিলুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘আগে রেল লাইন খারাপের কারণে ধীরগতিতে ট্রেন পরিচালনা করতে হতো। পাশাপাশি ট্রেন দুর্ঘটনার একটি ভয়ও থাকতো। বর্তমানে সেই আতঙ্ক নেই। স্বাচ্ছন্দ্যে ও নির্বিঘ্নে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যায়।’

কুমিল্লা রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলী (পথ) লিয়াকত আলী মজুমদার বলেন, ‘কুমিল্লা-লাকসাম রেলপথে ডাবল লাইন চালু হওয়ার পর যাত্রী সাধারণের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যে ও নিরাপদ ট্রেন যাত্রা নিশ্চিত করা হয়েছে। এ রেলপথে যাতায়াতে আগের চেয়ে প্রায় ৩০ মিনিট সময় কমে এসেছে। এ ছাড়াও ট্রেনযাত্রায় কমেছে ভোগান্তিও। কুমিল্লা-লাকসাম রেলপথে বর্তমানে যাতায়াতে বর্তমানে ২০-২৫ মিনিট সময় লাগছে। আগে লাগতো প্রায় ৪৫-৫০ মিনিট। সিঙ্গেল লাইন থেকে ডাবল লাইনে রূপান্তরিত হওয়ায় এ রেলপথে ট্রেনের সংখ্যা বেড়েছে। কমবে দুর্ঘটনাও।’