অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে নিহত ৬ রোহিঙ্গার পরিবারকে

কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ১৮ নম্বর ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত ছয় রোহিঙ্গার পরিবার ও স্বজনদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) এসব পরিবারের ৩১ সদস্যকে পুলিশের নিরাপত্তায় বালুখালী ক্যাম্প থেকে নিয়ে উখিয়ার ট্রানজিট পয়েন্টে রাখা হয়েছে।

বুধবার (২৭ অক্টোবর) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করে ৮ এপিবিএন-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরান হোসেন বলেন, ‘নিহত ছয় রোহিঙ্গা পরিবারের ৩১ সদস্যকে ক্যাম্প থেকে সরিয়ে ট্রানজিট পয়েন্টে রাখা হয়েছে। তবে বিষয়টি এমন না যে, তারা ক্যাম্পে অনিরাপদ ছিল। তাদের পরিবারের লোকজন মারা যাওয়ার পর তারাই খুবই ভয়ভীতির মধ্য রয়েছে। তারা অনুরোধ জানিয়েছিল, অন্যত্র সরিয়ে নিতে। এ কারণে তাদের সেখানে রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এ হত্যার ঘটনায় আমরা ১৪ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। ক্যাম্পে নিরাপত্তা জোরদার করেছি। রাতদিন টহলসহ অপরাধীদের ধরতে অভিযান চলছে।’

এদিকে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে অস্ত্রধারীরা রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহকে তার আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) কার্যালয়ে ঢুকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে দাবি করেন অনেক রোহিঙ্গা। এদের অনেকেই রাতে ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। ৩০ সেপ্টেম্বর মুহিবুল্লাহর ছোট ভাই হাবিব উল্লাহ বাদী হয়ে অজ্ঞাত ২৫ জনকে আসামি করে উখিয়া থানায় মামলা করেন। এরপর সন্ত্রাসীরা ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন মহিবুল্লাহর পরিবারের সদস্যরা। ফলে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

মুহিবুল্লাহ খুনের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৯ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে গত ১০ অক্টোবর আসামি মোহাম্মদ ইলিয়াছ কক্সবাজার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। গ্রেফতার আরেক আসামি আজিজুল হক গত ২৩ অক্টোবর হত্যায় সরাসরি জড়িত থাকার কথা কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জেরিন সুলতানার আদালতে স্বীকার করেন।

অন্যদিকে গত ২২ অক্টোবর (শুক্রবার) ভোরে উখিয়ার বালুখালী ১৮ নম্বর শরণার্থী শিবিরের দারুল উলুম নাদওয়াতুল উলামা আল-ইসলামিয়া মাদ্রাসায় ঢুকে গুলি করে ও কুপিয়ে ছয় জনকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ২৩ অক্টোবর রাতে উখিয়া থানায় মামলা করেন ওই ঘটনায় নিহত আজিজুল হকের বাবা নুরুল ইসলাম। মামলায় ২৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ২৫০ জনকে আসামি করা হয়। পরে নিহত ছয় জনের পরিবারকেও সরিয়ে অন্যত্র নেওয়া হয়।

ওই ঘটনায় নিহত একজনের স্বজন বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্প থেকে সরিয়ে একটি জায়গায় রাখা হয়েছে। ক্যাম্পের তুলনায় এখানে ভালো আছি। কিন্তু হারিয়ে যাওয়া পরিবার কি আর ফিরে পাব? আমরা চাই, এসব অপরাধীর কঠোর শাস্তি হোক না হলে এ ধরনের ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পাবে।’

উখিয়া বালুখালী ক্যাম্প ১৮-এর নেতা মো. ইউনুছ বলেন, ‘ক্যাম্পে একের পর এক হত্যাকাণ্ড হচ্ছে। এতে এখানকার বাসিন্দা সবাই খুব ভয়ভীতির মধ্য রয়েছে। অনেকে ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আবার অনেকে রাতে অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছেন। আমার ব্লকে নিহত পরিবারের স্বজনদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।’