মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরী: ৮৮ কারখানার চালু হয়েছে দুটি

শিল্পের বিকাশ ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কাজ শুরু হলেও আশানুরূপভাবে এগোচ্ছে না মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরীর কাজ। ২০০৯ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটির কাজ শেষ হয় ২০১৭ সালে। দুই দফা বরাদ্দ বাড়ানোর ফলে নির্মাণ ব্যয় দাঁড়ায় ২৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে ৮৮টি প্লটের বরাদ্দ দেওয়া হলেও কারখানা নির্মাণ কাজ শুরু করেনি বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে মাত্র দুটি কারখানা পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করেছে। সব কারখানা চালু হলে দেশের ৭৫তম শিল্পনগরীতে পাঁচ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে বিসিক শিল্পনগরীতে মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠানে মবিল ও কার্টনের পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করেছে। এছাড়া দুটি প্রতিষ্ঠানের কারখানা নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। অন্যদিকে প্লট বরাদ্দ পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে কারখানার লেআউট জমা দেওয়ার কথা থাকলেও ১৯টি প্রতিষ্ঠান তা করেনি। তাদের অতিরিক্ত তিন মাস সময় দেওয়া হলেও সেপ্টেম্বরে তা শেষ হয়। লেআউট জমা না দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলোর বরাদ্দ বাতিল হতে পারে।

বিসিক সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন মিরসরাই পৌরসভার পূর্ব তালবাড়িয়া রেলস্টেশন এলাকায় ২০১০-২০১১ অর্থবছর প্রকল্পের জন্য ১৫ দশমিক ৩২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। প্রথম অবস্থায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ২২ কোটি ৯৪ লাখ টাকায় একটি প্রকল্প হাতে নেয় বিসিক। প্রকল্পের প্রথম সংশোধনীতে ২ কোটি ১ লাখ টাকা বাড়িয়ে ২৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। ২০১৩ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ১২ মে জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে দ্বিতীয় সংশোধিত প্রকল্প আকারে বরাদ্দ বাড়িয়ে ২৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ২০১৭ সালের জুন মাসে। কাজ শেষ হওয়ার দুই বছর পর বরাদ্দের জন্য ৮৮টি প্লটের বিপরীতে ১১৪টি আবেদনপত্র জমা পড়ে। যাচাই-বাছাই শেষে ৮৮টি প্লট শিল্প উদ্যোক্তাদের বরাদ্দ দেয় বিসিক চট্টগ্রাম জেলা প্লট বরাদ্দ কমিটি। প্লটের প্রতি বর্গফুট জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৮০০ টাকা।

মিরসরাই-বিসিক

সূত্র আরও জানায়, মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরীতে এ-টাইপ প্লট-২৭টি, বি-টাইপ প্লট-৩৩টি ও সি-টাইপ প্লট-২৮টি। প্লট বরাদ্দ কমিটি প্রকৌশল খাতে ১৯টি, তৈরি পোশাক খাতে ১৬টি, খাদ্য ও খাদ্যজাত খাতে ১৯টি, কেমিক্যাল অ্যান্ড অ্যালাইড খাতে ১০টি, বন ও বনজাত খাতে তিনটি, প্যাকেজিং খাতে আটটি, সিরামিকস ও নন মেটালিক তিনটি, রাবার-লেদার অ্যান্ড অ্যালাইড খাতে চারটি প্লট বরাদ্দ দিয়েছেন। পণ্য উৎপাদনের জন্য গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ নানা সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরীকে।

সরেজমিন মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরী ঘুরে দেখা গেছে, নাছির কেমিক্যালে মবিল উৎপাদন ও খান এক্সেসরিজ কার্টন তৈরি শুরু করেছে। শিল্পপ্রতিষ্ঠান দুটি পরীক্ষামূলক (ট্রায়াল প্রোডাক্টসন) উৎপাদন করছে। এছাড়া খাজা ভাণ্ডার অটো রাইস মিলের কারখানা নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া ইউনোভা টেক্সটাইলের ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। শিল্পনগরীতে চারটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকি ৮৪টি প্লটে এখনও কোনও প্রতিষ্ঠান কারখানা নির্মাণ কাজ শুরু করেনি।

নাছির কেমিক্যালের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ২০১৯ সালের শেষে দিকে মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরীতে সাড়ে ১১ শতাংশ জমি বরাদ্দ পাই। কারখানার নির্মাণকাজ শেষে পরীক্ষামূলক ট্রান্সফরমার রিসাইক্যালিং, গ্রিজ ও মোবিল উৎপাদন শুরু হয়েছে।

শিল্পনগরীতে কাজ চলছে একটি অটো রাইস মিলের

বিসিক চট্টগ্রামের প্রমোশন কর্মকর্তা ও মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরী দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ তানজিলুর রহমান জানান, ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে ৮৮টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হলেও করোনা পরিস্থিতিতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান প্লট বুঝে পেয়েও কারখানা নির্মাণ শুরু করতে পারেনি। করোনার কারণে অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন চারটি প্রতিষ্ঠান চালু হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্লট বুঝে পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে কারখানার লেআউট জমা দিতে হয়। লেআউট অনুমোদন হলে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে কারখানার নির্মাণ শুরু এবং ১৮ মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করার নিয়ম রয়েছে। প্লট বরাদ্দ পাওয়ার পরেও ১৯টি প্রতিষ্ঠান লেআউট জমা দেয়নি। তাদেরকে এলইসি সভায় তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছিল। গত সেপ্টেম্বরে তা শেষ হয়েছে। ওই প্লট মালিকদের বিষয়ে পরবর্তীতে সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।