সরে দাঁড়ালেন নৌকার প্রার্থী, জয়ের পথে বিদ্রোহী প্রার্থী

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সলিমাবাদ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল মতিন নৌকা প্রতীক পাওয়ার পরও প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এতে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল আহমেদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হতে চলেছেন। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে।

আগামী ২৮ নভেম্বর বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তেরোটি ইউনিয়নের মধ্যে এগারোটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বাকি দুটি ইউনিয়নের মেয়াদ পূর্ণ না হওয়ায় পরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সূত্র জানায়, গত ২১ অক্টোবর তৃণমূল আওয়ামী লীগের ভোটের মাধ্যমে তারা দলীয় প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হয়। এতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ বাঞ্ছারামপুর আসনের সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন এবি তাজুল ইসলামের ঘনিষ্ট অনুসারী বলে পরিচিত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল আহমেদ পেয়েছিলেন ৩৩২ ভোট। অন্যদিকে যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা মহিউদ্দিন মহির অনুসারী হিসেবে পরিচিত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবদুল মতিন পেয়েছিলেন ১১৭ ভোট। কিন্তু কেন্দ্র থেকে জালাল আহমেদকে না দিয়ে আবদুল মতিনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এর পর থেকে ইউনিয়ন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ নাখোশ হয় আবদুল মতিনের ওপর। এর পর থেকে চাপের মুখে পড়েন তিনি। এজন্যই আজ মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিনে তিনি নিজের অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে মনোয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন।

এ ব্যাপারে আব্দুল মতিন বলেন, ‘আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। এর বেশি আর কিছু বলতে পারবো না।’

অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী জালাল আহমেদ বলেন, ‘আজ দুজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এখন আমি ছাড়া আর কেউ নেই। তাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আমি নির্বাচিত হতে চলেছি। এ জন্য আমি সবার দোয়া এবং সহযোগিতা চাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘নৌকা প্রতীক পেয়ে মতিন ভাই কেন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলেন সে  বিষয়টি আমার জানা নেই।’

এ ব্যাপারে সলিমাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনিসুজ্জামানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘তৃণমূল আওয়ামী লীগের ভোটাভুটিতে জালাল আহমেদ বিপুল ভোটে প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন। তার পক্ষে তৃণমূল আওয়ামী লীগ আছে। তবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ থেকে আব্দুল মতিনকে নৌকার প্রতীক দেওয়া হয়েছিল। তিনি আজ তা প্রত্যাহার করেছেন। এর বেশি আমার আর কিছু জানা নেই।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘তৃণমূল থেকে জালাল আহমেদ বিপুল ভোটের ব্যবধানে প্রথম হয়েছিলেন। আমরা উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তার নাম কেন্দ্রে এক নম্বরে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু যিনি দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন তাকে দলীয় প্রতীক নৌকা দেওয়া করা হয়। এতে আমরা অনেকটাই অবাক হয়েছিলাম। তবে আজ আব্দুল মতিন তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। তিনি কেন করেছেন সে বিষয়টি আমার জানা নেই।’

বাঞ্ছারামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবু তৌহিদ জানান, মোট তিন জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে লড়ার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। যাচাই-বাছাই শেষে তিন জনের মনোনয়নপত্রই বৈধ ঘোষণা করা হয়। আগামী ১১ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় রয়েছে। দুই প্রার্থী আব্দুল মতিন ও হোসেন মিয়া রবিবার তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এর ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থী জালাল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। তিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে পরিচিত।