ঘুরতে যেতেন প্রতি শুক্রবার, এবার ফিরলেন লাশ হয়ে

বিভিন্ন জেলা-উপজেলার দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ ও ঐতিহ্যবাহী মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করা ছিল ছয় বন্ধুর শখ। এজন্য প্রতি শুক্রবার মোটরসাইকেলে ঘুরতে বের হতেন। কে জানতো এটাই ছিল তিনজনের শেষযাত্রা৷ শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) সড়ক দুর্ঘটনায় একটি মোটরসাইকেলে থাকা তিনজনই প্রাণ হারান। নিহতদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।

শুক্রবার সকালে দুটি মোটরসাইকেলে করে কুমিল্লার চান্দিনা ছাড়েন ছয় বন্ধু। প্রথমে তারা যান চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলায়। সেখানকার বড় মসজিদে জুমার নামাজ আদায় শেষে মোহনার উদ্দেশ্যে রওনা হন। কিছুদূর যেতেই সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন একটি মোটরসাইকেলে থাকা তিনজন। বাসের চাপায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তারা।

নিহতরা হলেন—চান্দিনা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বেলাশহর এলাকার মো. আবদুল কাদেরের ছেলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি দুই সন্তানের জনক মো. মনির হোসেন (৩২), তাজুল ইসলামের ছেলে ফার্নিচার মিস্ত্রি মো. সোহাগ হোসেন (২৫) ও মজনু মিয়ার ছেলে রাজমিস্ত্রি মো. সুজন মিয়া (২২)।

একই গ্রামের তিন বন্ধুর মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন স্বজনরা। তিন পরিবারের সদস্যদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে গোটা এলাকা। সন্তান হারানোর বেদনায় বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন মা-বাবা। তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই প্রতিবেশীদের।

স্বজনদের আহাজারীতে প্রতিবেশীরাও নির্বাক

এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা মনিরের স্ত্রী দিশেহারা। অন্তঃসত্ত্বা সোহাগের স্ত্রী বার বার লুটিয়ে পড়ছেন।

দুই ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের জনক মজনু মিয়া। ১৬ বছর বয়সী মেয়েকে হারিয়েছেন চার বছর আগে। উপার্জনক্ষম বড় ছেলে সোহাগকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ মজনু মিয়া ও তার স্ত্রী ফরিদা।

নিহতদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের চোখে পানি। স্তব্ধ গোটা এলাকা।

নিহত সুজনের বাবা মো. মজনু মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা ছয় বন্ধু শুক্রবার এলেই বিভিন্ন জায়গায় নামাজ পড়তো ও ঘুরতে যেতো। আজ সকালে হাজীগঞ্জ মসজিদে নামাজ শেষে চাঁদপুর যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় পড়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুক্রবার দুপুরে দুই মোটরসাইকেলে করে হাজীগঞ্জ থেকে চাঁদপুর শহরের দিকে যাচ্ছিলেন তারা৷ এ সময় কুমিল্লাগামী বোগদাদ ট্রান্সপোর্টের বাসের সঙ্গে একটি মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হন। বাকি তিন বন্ধু সুস্থ আছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাজীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ।